ছন্দা বাগচী, বালিগঞ্জ, ১৩ জুলাই#
আগামী বছর পুরভোটের কথা মাথায় রেখে রাজ্য সরকার কলকাতা পুরসভার জন্য নানান খাতে ব্যয়বরাদ্দ বাড়ালেও নাগরিকদের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। বালিগঞ্জের ওয়ার্ডগুলিতেও পুর পরিষেবার অবনতির লক্ষণ স্পষ্ট। জঞ্জাল সাফাই থেকে বড়ো রাস্তার দু-ধারে ব্লিচিং ছড়ানো সবই হয়, কিন্তু অনিয়মিত। মাঝে মধ্যে বাড়ি বাড়ি ঘুরে তেল দেওয়া হলেও মশার কামান দাগার পাট চুকেছে কবেই! বেআইনি নির্মাণ আর অবৈধ মিউটেশন সংক্রান্ত ভুরি ভুরি অভিযোগের কিনারা হওয়া দূরের কথা, নানান অনিয়ম অসঙ্গতির নিত্য নতুন নমুনা চোখে পড়ছে। ৯৩ নং ওয়ার্ডে বোজানো ঝিল পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন আজও অধরা। ৮৫ নং ওয়ার্ডের অনুকরণে ৬৮ নং ওয়ার্ডে ফুটপাথ সংস্কারের কাজে জোয়ার এলেও রাস্তা দখল আর ফুটপাথের জায়গা জুড়ে বেআইনি বাড়ি ভাঙার তাগিদ নেই পুরসভার। সম্প্রতি পুরসভার নিকাশির দায়িত্ব হস্তান্তরিত হওয়ায় এই বর্ষায় রাস্তাঘাটে জল জমার আতঙ্কে ভুগছেন কেউ কেউ। কেননা সংশ্লিষ্ট মেয়র পারিষদের বিরুদ্ধে যার যত নালিশই থাক, তাঁর উদ্যোগেই যে অতি বর্ষণেও জমা হল দ্রুত নেমে যেত — এবিষয়ে দক্ষিণের বাসিন্দারা অনেকেই একমত।
গড়িয়াহাটায় টিউবওয়েল বিভ্রাট
কলকাতা পুরসভার ৬৮ ও ৯০ নং ওয়ার্ডের একাংশে বেশ কিছুদিন হল ণ্ণটিউবওয়েল ভূত’-এর উপদ্রব শুরু হয়েছে। একডালিয়া প্লেস, মণি মুখার্জি রোড, ফার্ণ রোড সহ কাঁকুলিয়া আর বালিগঞ্জ গার্ডেন্স সংলগ্ন নানা রাস্তায় চোরাগোপ্তা হানা দিয়ে ডিপ টিউবওয়েলগুলিকে কে বা কারা খারাপ করে দিচ্ছে! কোথাও পাইপে ইঁট-পাথরের টুকরো ভরে, কোথাও বা হাতল ভেঙে টিউবওয়েলের বারোটা বাজাচ্ছে অজানা ণ্ণভূতের দল’। একে জলস্তর নেমে যাওয়ায় দুর্ভোগের অন্ত নেই, তার ওপর একের পর এক টিউবওয়েল বিভ্রাটে সাধারণ নাগরিকদের নাভিশ্বাস উঠেছে। কেন না, এসব এলাকায় পুরসভার পরিশুদ্ধ জলের চাহিদা — যা নিম্ন আয়ের বাসিন্দাদের পক্ষে নগদ কড়ি গুণে কেনা অসম্ভব। তাদেরই একাংশের অভিযোগ — ডিসটিলড ওয়াটারের কারবারিরা লোক নিয়োগ করে এইসব অপকর্ম ঘটাচ্ছে — খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বরং এর পেছনে রাজনৈতিক মদত থাকার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ, দেখা যাচ্ছে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থকরা যেসব টিউবওয়েল ব্যবহার করে, বেছে বেছে সেগুলোকেই অকেজো করে দেওয়া হয়। পুরপিতা মেরামতির উদ্যোগ নিলেও টিউবওয়েল-ভূতদের শনাক্ত করতে সচেষ্ট হল না হয়তো ‘সর্ষের মধ্যে ভূত’ থাকাতেই!
তাছাড়া এই অভিযোগ আরও বিশ্বাসযোগ্য, কারণ শাসকদলের কারো কারো মধ্যে বিরোধীদের জমাদার-দুধওয়ালা আটকে কোণঠাসা করার অর্থাৎ শাসককে সেলাম ঠুকতে বাধ্য করার প্রবণতা যথেষ্ট পরিমাণে আছে বলেই। তাই ঘন ঘন টিউবওয়েল খারাপ হওয়া আর তার মেরামতি খাতে খরচ — দুইই সমান তালে চলছে, চলবে।
‘সুলভ’ সমাচার
শহরের বাকি অংশের মতো বালিগঞ্জেও ‘ণসুলভ’ শৌচালয়ের রমরমা বেড়েই চলেছে। নিকাশি নালার অব্যবস্থার দোহাই দিয়ে নিখরচার শৌচাগারগুলো তুলে দেওয়া নিশ্চয় কাজের কথা নয়। কিন্তু ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সদর দপ্তরের অদূরে এমনই একটি শৌচাগার নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ট্রাম ডিপো চত্বর আরও দূষিত হচ্ছে — অথচ যানবাহন এড়াতে স্টেশনে যাতায়াতকারী নিত্যযাত্রীরা এই চত্বরটিই বরাবর ব্যবহার করে আসছে। বাসডিপোর অনতিদূরে সুলভ সংলগ্ন নিখরচার শৌচাগারটিরও বেহাল দশা। অথচ পাশের সুলভ-টি পরিচ্ছন্ন। ঝকঝকে তকতকে ৬৮ নং ওয়ার্ড অফিসের ‘ণসুলভ’ ধাঁচের শৌচালয়টিও। তাই পথচলতি মানুষজন থেকে স্থানীয় বাসিন্দা — অনেকেরই আশঙ্কা, এইভাবে নিখরচার শৌচাগার তুলে দিয়ে সুলভের বাড়বাড়ন্ত ঘটানোই পুরসভার আসল উদ্দেশ্য। কিন্তু পুরসভার মতো নির্বাচিত সংস্থার এমন বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গী প্রত্যাশিত নয় — যেখানে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে আরও বেশি সংখ্যায় নিখরচার মহিলা ও পুরুষ শৌচাগার চালু করা দরকার। কেননা, প্রাকৃতিক ক্রিয়ায় ১/২ টাকা খরচ করার সামর্থ্যও সবার থাকে না। বিশেষ করে যে শহরের যত্রতত্র ফুটপাথবাসী আর ভবঘুরেদের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।
Leave a Reply