সুদীপ্তা পাল, অধিকার সংগঠনের সম্পাদকের প্রেস বিজ্ঞপ্তি থেকে, ১২ জানুয়ারি#
বাঁকুড়ার মেজিয়ায় শোভা ইস্পাত লিমিটেড কোম্পানিতে ৪০ জন শ্রমিক ছাঁটাই হয়ে যায় ১ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে। এরা ৮ জানুয়ারি থেকে কারখানার গেট-এ আমরণ অনশন-এ বসেছিলেন। ১১ জানুয়ারি তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত ৪০-৫০ জন গুণ্ডা রাত ৯ টার সময় অনশনমঞ্চে হামলা চালায় এবং ছাঁটাই শ্রমিকদের মারধোর করে ও অনশন তুলে নিতে বাধ্য করে।
এই শ্রমিকরা ২০০৯ সালের ৯ আগস্ট থেকে শোভা ইস্পাতের কাজে বহাল হয়েছিলেন। মাস মাইনার পে স্লিপ ছাড়াও এদের রয়েছে ইএসআই কার্ড, এমপ্লয়ি প্রভিডেন্ট ফান্ড অ্যাকাউন্ট নাম্বার। এদের মধ্যে কেউ কেউ কোম্পানির সিমেন্ট ডিভিশনে কাজ করত। গত সাত মাস ধরে সিমেন্ট ডিভিশনে উৎপাদন বন্ধ হয়ে আছে। ওই ৪০ জনের মধ্যে ৩৪ জন সিমেন্ট ডিভিশন থেকে ফেরো ডিভিশনে বহাল হয়েছিলেন কাজে। অর্থাৎ শেষ ছ’ মাস ধরে ওরা স্পঞ্জ আয়রন ইউনিটে, ফেরো ডিভিশনে এবং মেকানিকাল ডিভিশনে কাজ করছিল। প্রসঙ্গত, এই সব ইউনিটে কাজ করে পার্মানেন্ট শ্রমিকরা। কিন্তু এই সব শ্রমিকরা ই আর কনস্ট্রাকশন নামের এক কনট্রাকটরের অধীনে বহাল হয়। তারপর শোভা ইস্পাত লিমিটেড কারখানার তরফে স্ট্যাম্পবিহীন একটি কাগজে কনট্রাকটরের কাছে নির্দেশ আসে, যেহেতু সিমেন্ট ডিভিশন বন্ধ হয়ে গেছে, তাই কনট্রাকটর যেন তার লোকজন তুলে নেয় ৩০ ডিসেম্বর ২০১২-র মধ্যে।
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ওই ছাঁটাই হওয়া শ্রমিকদের জায়গায় নতুন শ্রমিক নেওয়া হয়। শ্রমিকদের মতে, তলায় তলায় প্রচার ছিল, তোমরা সিপিএমের লোক, অনেকদিন কাজ করেছ, এবার টিএমসি-র লোকেরা কাজ করবে। শ্রমিকরা আরও জানায়, তিনমাস আগে এই কোম্পানিরই ৪০ জন প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ডকে বসিয়ে দিয়ে নতুন লোক নেওয়া হয়েছিল। যাই হোক, ওই চল্লিশ জন ছাঁটাই শ্রমিক এরপর বিভিন্ন দলের স্থানীয় নেতাদের কাছে ঘুরতে থাকে। কিন্তু কোনও আশ্বাস পায় না। ১০ ডিসেম্বর থেকে তারা কোম্পানির গেটে রোজ ধরনা দিতে থাকে। মেজিয়ার ব্লক উন্নয়ন অফিসার এবং বাঁকুড়ার সংযুক্ত শ্রম কমিশনারের কাছেও তারা যায় ম্যানেজমেন্ট-শ্রমিক-শ্রম কমিশনার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক চেয়ে এবং কাজে পুনর্বহালের দাবি নিয়ে। ১৭ ডিসেম্বরের পরে শ্রম কমিশনার দুটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করে। কিন্তু কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট তাদের কাজে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়নি। ফলে উপায়ান্তর না দেখে তারা ৮ জানুয়ারি আমরণ অনশনে বসার সিদ্ধান্ত নেয়।
একথা উল্লেখ্য, বিভিন্ন কোম্পানিতে পুরনো ঠিকা শ্রমিক ছাঁটাই করে নতুন ঠিকা শ্রমিক কাজে নেওয়া চলছে প্রায় এক বছর ধরে। ছ-সাত মাস আগে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে ৪০০ জন ঠিকা শ্রমিকের ওপর হামলা চালিয়েছিল তৃণমূল আশ্রিত গুণ্ডারা, পরিচয়পত্র কেড়ে নিয়ে তাদের প্ল্যান্টে ঢুকতে বাধা দিয়েছিল। ওই শ্রমিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ১৫ দিন তৃণমূল পার্টি অফিসে গিয়ে হাজিরা দিতে, তবে তারা ডিএসপি-তে কাজ করতে পারবে।
Leave a Reply