আজ হকার সংগ্রাম কমিটির ডাকে গত প্রায় এগারো মাস ধরে কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে উচ্ছেদ হওয়া হকারদের ণ্ণশান্তি মিছিল’ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ওয়েলিংটন, তালতলা, হিন্দ সিনেমা হয়ে চিত্তরঞ্জন এভিনিউ পর্যন্ত চলে। মিছিলে আসা একজন হকারকে মিছিলের বিষয়ে কিছু জানতে চাইলে তিনি আমাকে নেতাদের সাথে কথা বলতে বলেন। আমি বললাম, আমি আপনার সাথেই কথা বলতে চাই। তাতে তিনি ও আশপাশের কয়েকজন রাজি হলেন।
কথায় কথায় জানা গেল ওঁরা হাওড়ার মঙ্গলার হাটে বসেন। আমি ওখানকার বর্তমান পরিস্থিতির কথা জানতে চাইলে ওঁদের মধ্যে থেকে একজন জানালেন, যারা একদম ভোরবেলা থেকে দশটা অবধি হাটে বসত তারা এখন সাতটা অবধি বসছে। আর যারা দশটার পর বসত তারা আর বসতে পারছে না। ওদের অবস্থা খুব খারাপ। সব মিলিয়ে তারা প্রায় দু-হাজারের মতো ছিল। তার হিসাব কেউ রাখে না। কেউ কেউ রাস্তার ধারে না বসে ফুট ব্রিজের সিঁড়িতে বসছে প্রচণ্ড ঝুঁকি নিয়ে। বললেন, এভাবে দোকান করা যায় না। আমি জানতে চাইলাম, আপনার বাড়ি কোথায়? তিনি বললেন, চুন্নিবাবুর বাজারের কাছে। জানতে চাইলাম, হাতিবাগান চত্বর ছেড়ে ওখানে বসলেন? — ওখানে বসে আমাদের পোষাবে না।
জানতে চাইলাম, এখানে যে আপনাদের তুলে দিল, শুধু কি জ্যাম হচ্ছে বলেই না কি আশপাশে শপিং মল হয়েছে তাই এরকম ব্যবস্থা? তিনি বললেন, না সেরকমটা নয়। তাছাড়া আমাদের বাজার তো পাইকারির। ওখানে জ্যাম হতো অটো আর বাসের জন্য। ওরাই ওই জায়গায়টায় গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখত ইচ্ছে করে আরও প্যাসেঞ্জার পাবার জন্য। ওদের কিছু বলল না।
যেদিন প্রথম আমাদের তুলতে এল, তখন আমরা সবাই ঠিক করেছিলাম বাধা দেব। আমরা কতকটা বুঝতেও পারিনি, ওরা হঠাৎ মাইকে ঘোষণা করে বলল, না উঠলে অ্যারেস্ট করব। তখন অনেকে ভয় পেয়ে গেল। আমিও ভয় পেয়েছিলাম। তাই আর গ্রেপ্তার হইনি। ওই যে দেখছেন ছেলেটিকে, ওর বাড়ি উড়িষ্যায়, ও এখানে হকারি করে বাড়িতে টাকা পাঠায়। ও গ্রেপ্তার হয়েছিল। পুলিশ অনেক উল্টোপাল্টা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। প্রায় পনেরো দিন পরে ছাড়া পায়।
আমি জানতে চাইলাম, আপনারা সরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসছেন, না ওখানেই বসতে চাইছেন? — আমরা তো চাই ওখানে বসতে। ওখানে চোদ্দ বছর ধরে বসছি। আমাদের ওখানে কোনো ইউনিয়ন ছিল না। আমরা পুলিশকে টাকা দিতাম। যার যেমন ব্যবসা সে রকম টাকা দিত। এই ধরুন ৩০, ৭০, ১০০ এরকম। আবার যার ব্যবসা খুব ছোটো, সেরকম হয়তো কেউ কেউ কিছু দিত না।
আমরা ওখানে চার পাঁচ ঘন্টা বসলে ৫০০-৬০০ টাকা লাভের ব্যবসা হত। তাতে পুষিয়ে যেত। ওস্তাগারদের কাছ থেকে বেশি মাল নিয়ে কম মার্জিনে ছেড়ে দিলেও আমাদের চলে যেত। এখন সময় আর জায়গা ধরে বসতে না পারায় খুব ক্ষতি হচ্ছে। অনেকে একটু দূরে রেল কোয়ার্টার্সের পাশে ব্রিজে কাউকে পয়সা দিয়ে বসছে।
২৬ মে আন্তর্জাতিক হকার দিবস উপলক্ষ্যে আইন অমান্য আন্দোলন হওয়ার ঘোষণা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে নগরোন্নয়নমন্ত্রী হকার সংগ্রাম কমিটির নেতাদের হকারদের দাবিদাওয়া সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আইন অমান্যের বদলে শান্তিপূর্ণ মিছিল হয়।
শ্রীমান চক্রবর্তী, সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, কলকাতা, ২৬ মে
Leave a Reply