• প্রথম পাতা
  • আন্দোলন
  • কৃষি ও গ্রাম
  • খবরে দুনিয়া
  • চলতে চলতে
  • পরিবেশ
  • শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
  • শিল্প ও বাণিজ্য
  • নাবালকথা

সংবাদমন্থন

পাতি লোকের পাতি খবর

  • আমাদের কথা
    • যোগাযোগ
  • পত্রিকার কথা
    • পাক্ষিক কাগজ
    • জানুয়ারি ২০০৯ – এপ্রিল ২০১২
  • মন্থন সাময়িকী
    • মন্থন সাময়িকী নভেম্বর ডিসেম্বর ২০১৪
    • মন্থন সাময়িকী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ২০১৪
    • সাম্প্রতিক সংখ্যাগুলি
    • সাম্প্রতিক পিডিএফ
    • পুরনো সংখ্যাগুলি
  • সংবাদ সংলাপ
  • বিষয়ের আলোচনা

পিংলার বিস্ফোরণে নিহত নয়টি শিশু-কিশোরের ঘরের দাওয়ায় : জহিরুদ্দিন শেখ (১৯)

June 17, 2015 admin Leave a Comment

শমীক সরকার, নতুন চাঁদরা, মুর্শিদাবাদ, ১৪ জুন। অনুসন্ধানকারী দলটিতে ছিলেন মুহাম্মদ হেলালউদ্দিন, শমীক সরকার, শ্রীমান চক্রবর্তী, চিররঞ্জন পাল এবং মুহাম্মদ রাকিন শেখ#

মৃত জহিরুদ্দিন শেখ-এর দিদা, ক্ষুদি। ছবি শমীক সরকারের তোলা। ১৪ জুন ২০১৫

নতুন চাঁদরা কোনো গ্রাম নয়। মুর্শিদাবাদের ঔরঙ্গাবাদের একটি বস্তিই বলা যেতে পারে। পাশাপাশি ঠাসাঠাসি ঘরগুলো। যে বাচ্চা ছেলেটি আমাদের ডেকে তার বাড়ি নিয়ে গেল সে বাড়ি পৌঁছে আমাদের সামনে বসে জানালো, ‘ওই বোমা বিস্ফোরণের জায়গায় আমি ছিলাম। আমার নাম মুস্তাক শেখ, বয়স চোদ্দ। … পড়াশুনো অনেকদিন আগেই ছেড়ে দিয়েছি। আমাকে আর দাদাকে রাজমিস্ত্রির কাম বলে নিয়ে গিয়েছিল, নিয়ে গিয়ে বাজি কারখানায় কাম করাচ্ছিল।’ পাশ থেকে মা শিরিনা বেওয়া বলে উঠল, ‘বাবাটা মরে গিয়েছিল, তাই রাজমিস্ত্রীর কাম ধরে নিয়েছিল দু-ভাই। ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলোকে কে খাওয়াবে। সব তো ছোটো ছোটো আমার।’ দাদা জহিরুদ্দিন শেখ (১৯) মারা গেছে ওই বিস্ফোরণে। সতেরোদিন হাসপাতালে ছিল। কলকাতার বাঙুর-এ। ২৯ মে মারা গেছে। দাদা দিদার বাড়িতে মানুষ। পড়াশুনা করেনি। বাবাও বাইরে বাইরে মিস্ত্রির কাজ করত। বাবা রবিউল শেখ, মারা গেছে আট ন’মাস হয়ে গেল। বড়ো ছেলেটা বাবার সঙ্গেই কাজ করছিল, বাইরেও যেত। বাবা মারা যাওয়ার পর ভাইকে নিয়ে যেত।

দাদা জহিরুল মারা গেছে বিস্ফোরণে। প্রস্রাব করতে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে ভাই মুস্তাক শেখ (১৪)। ছবি শমীক সরকার। ১৪ জুন ২০১৫
দাদা জহিরুদ্দিন মারা গেছে বিস্ফোরণে। প্রস্রাব করতে বাইরে যাওয়ার জন্য প্রাণে বেঁচে গেছে ভাই মুস্তাক শেখ (১৪)। ছবি শমীক সরকার। ১৪ জুন ২০১৫

মুস্তাকরা ছ’ ভাই বোন। বাকি চারটে ছোটো। এই বাজি কারখানায় তিনদিন বা চারদিন কাজ করছিল মুস্তাক। সে বলল, ‘আমি তো হালেই গেলাম’। কতটা সত্যি কথা কে জানে। ওখানে কত মাইনে টাইনে দেয় জিজ্ঞেস করতে পাশ থেকে মা জোরগলায় বলে উঠল, ‘না, এরা জানে না’। মুস্তাক বলে, ‘আমি বাচ্চা, আমাকে লিয়ে গেল। কি জানি …। এই রকম একটা ঘরে আমরা সবাই পাশাপাশি শুয়ে থাকতাম। আমাদের গ্রামেরই সব — দশ বারোজন। আর মালিক, মালিকের স্ত্রী। যেদিন বাস্ট হলো, আমি প্রস্রাব করতে গিয়েছিলাম বাইরে। এই যে আমার হাতে কোমরে লেগেছে।’ আবার যাবে কাজ করতে? মা বললেন, ‘না। আমার ছোটো ছেলে কি করতে যাব। যে ছেলেটা বড়ো, ভাই বোনের মুখে আহার দিত। সেটাই তো মারা গিয়েছে। বাবা মরার পর থেকে আমার ছেলে হাওড়াতে কাজে যেত। ওখান থেকে কে নিয়ে গেছে ওই বাজি কারখানার কাজে।’ পাশ থেকে মুস্তাক বলে, ‘মালদাতে কাজে যেত। তারপর কলকাতার লাল বাড়ি, সেখানে যেত। বাঁকড়ায় কাজ করত।’ পাশ থেকে আরেকজন মহিলা বলে ওঠে, ‘পয়সার লোভ। মনে করেন, আমার বুদ্ধি আলাদা। এর বুদ্ধি আলাদা। আপনি বলছেন যে বেশি পয়সা দিমু। আপনি বলছেন কি বেশি টাকা দিমু। এভাবে নিয়ে চলে গিয়েছে। ঘরে বৃষ্টি হলে থাকতে পারে না।’ পাশ থেকে মা বলে ওঠেন, ‘দ্যাখেন দাদা, ঘরে সবই ভাঙাচোরা। ওই যে পড়ে আছে শ্বাশুড়ি দ্যাখেন। আমার খাটনেবালা লোক না। … এই ঘরটা আমি পেয়েছি। গিয়াস কোম্পানি থেকে।’
গিয়াস কোম্পানি মানে পতাকা বিড়ি। পতাকা বিড়ির মালিক থাকে পাশের গ্রাম চাঁদরায়। প্রাসাদপম বাড়ি। সে যাদের ঘর নেই, তাদের একটা ঘর করে দিয়েছে। সে এসব কাজ করে ‘জি ডি’ বা গিয়াসউদ্দিন ও দিলখুশ নামে, তেমনই শোনা গেল। গিয়াসউদ্দিন — পতাকা বিড়ি মালিকের বাবার নাম। দিলখুশ তার মায়ের নাম।

Sorry, your browser doesn’t support HTML5 audio. 
সাক্ষাৎপর্বের সম্পূর্ণ অডিও টেপ। সময় ২০ মিনিট

আপনারা কতদিন আছেন এখানে? মা বললেন, আমার বাপের বাড়ি জঙ্গীপুর। কথা ধরে নিয়ে মুস্তাকের ঠাকুমা বললেন, ‘নদীতে সব কেটে চলে গেল ব্যাটা। নদীতে সব কেটে চলে গেলে আশ্রয় যারা নিয়েছিলাম, সেই আশ্রয়তেই আছি। নিজের জায়গা নেই। আমার নাম ক্ষুদি। আমার সাতটা ছেলে মেয়ে। যখন এখানে এসেছিলাম, তখন একটা ছিল। একটা ছেলে আটবছরে ডুবে গেল। তারপর একটা বর্ধমানে গেল প্যাটে অপারেশন না কি বলে, উটা বর্ধমানে মরে গেল। ইটাও (রবিউল শেখ) মরে গেল। ফের পোতাটাও মরে গেল। এখন আমায় কে দেখবে? আমরা এখানে আসার আগে থেকেই বিড়ি বাঁধতাম। এখানে এসেও তাই। আমাদের এদিকে বিড়িরই রাজ্য। আমাদের কোনো চাষজমি ছিল না বাবা। বিড়ি বাঁধাটাই কাজ। … এখানকার জমি পাট্টা হয়েছে আমাদের নামে দু-বছর হলো।’ … ছেলে মারা যাওয়ার জন্য টাকা পেয়েছেন? মা বললেন, ‘পঞ্চাশ হাজার পেয়েছি। চেক জমা দেওয়া আছে ওখানে। আমার ছেলে বেঁচে ছিল তো। সতেরো দিন পরে মরে গেল। দেড় লাখ টাকা পরে পাওয়া যাবে বলেছে। (মুস্তাক-কে দেখিয়ে) এই ছেলেটাকে দেয়নি কিছু। এরও হাতে সেলাই হয়েছে। মাজাটা এখনো ব্যাথা, কাজ করতে পারবে না।’ মুস্তাক বলে আস্তে আস্তে, ‘মাজাটা খুবই লাগছে, পড়ে গেছিলাম তো। খুব জোরে বাস্ট হয়েইলছে। বাজিতে বাস্ট হয় না। বিশাল জোরে বাস্ট। … আর অত খতরনাক কামে কি যাব আমরা? মরব ওইটুক পয়সার জন্য?‘ আশপাশ থেকে গুঞ্জন ওঠে, অন্য কিছু ব্যাপার আছে। বাচ্চা ছেলেদের নিয়ে গেছে, জানে বুঝতে পারবে না। হাওড়া থেকে কে নিয়ে গেছিল ওখানে? প্রশ্নের উত্তরে মুস্তাক বলে, ‘একটা কে এসেছিল ওখানকার, রাম মাইটি’। রাম মাইতি পিংলার অভিশপ্ত বাজি কারখানাটির মালিকের নাম। বিস্ফোরণে সে-ও মারা গেছে।

আজমের শেখ, রূপসী খাতুন, আর কাবা -- জহিরুদ্দিনের তিন ভাই বোন স্কুলে পড়ে। ছবি শমীক সরকার। ১৪ জুন ২০১৫
আজমের শেখ, রূপসী খাতুন, আর কাবা — জহিরুদ্দিনের তিন ভাই বোন স্কুলে পড়ে। ছবি শমীক সরকার। ১৪ জুন ২০১৫

মুস্তাকের বোন রূপসী খাতুন, ক্লাস ফাইভে পড়ে। ভাই আজমের শেখ পড়ে ক্লাস থ্রি তে। আরেক ভাই কাবা। পড়ে ক্লাস টু-তে। আর একজন পড়ে ‘খিচুড়ি স্কুল-এ’। মুস্তাক বলে, ‘আমি যদি স্কুলে যাই, তাহলে মা ভাইদের কে খেতে দেবে।’ তুমি তাহলে কি করবে এখন? ‘কাজ করবো।’ পাশ থেকে মা বলে, ‘কি করে কাজে যাবে, মাজায় ব্যাথা।’ আর ঠাকুমা বলে ওঠে, ‘ওরে বাবা কী কাজ করবে। মাথার ওপরে ছাতা নেই, ছাতা পড়ে গেছে। আমি এখন এর ওর কাছে যাচ্ছি, ছেলেটাকে তুমি লিয়ে যাবা? একে লিয়ে যাবা একটু বাজারে, কাজে? ওর কি বাবা, ভাই আছে? নিজের মাথা আছে? ওর কি আছে? ছেলের মাথা ঠিক নেই। টলমল টলমল করছে। ব্যাটা বেঁচে ছিল, আমার বুকে উপ ছিল। ব্যাটা বেরিয়ে বেরাইত, আমি একনজর খাড়া হয়ে দেখতাম। আমার কলিজাটায় উপ আসত। বৌ ছটা সাতটা ছেলে লিয়ে পাঁচশো বিড়ি বাঁধতে পারবে। ব্যাটার লগে কাঁদছে। স্বামীর লগে কাঁদছে। বিড়িটা বাঁধবে কে? বিড়িটা বাঁইধে দিলে তবে তো পয়সা দিবে বাবা মুনষি। এমনি তো পয়সা দিবে না। তোমাদের কাছে জোরহাত করে বলছি, আমার পয়সা ক’টা বাবা তোমরা …।’
বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার পথে রবিউল শেখ কীভাবে মারা গিয়েছে একবার জিজ্ঞেস করতে মুস্তাকের মা বলল, ‘ওর বাবাও রাজমিস্ত্রির কাজে যাবে বলে ওই কাজে গিয়ে আগুন লেগে মারা গিয়েছে। মিছে কথা বলব না এখন আর। হুগলির পাণ্ডুয়ায়। খন্ডন (খন্যান?) স্টেশনে নেমে যেতে হয়।’ আরেকজন বলল, ‘খুব শক্তিমান ছিল সে।’
ফের একবার কান্নার রোল তুলে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা।

Sorry, your browser doesn’t support HTML5 video.

মুস্তাক শেখের দাদি ক্ষুদি বেওয়া-র কথা, সময় ১মিনিট৩৮সেকেন্ড

মানবাধিকার অভিবাসী শ্রমিক, অরঙ্গাবাদ, নতুন চাঁদরা, পতাকা বিড়ি, পিংলা বিস্ফোরণ, বাজি কারখানা, বিড়ি শ্রমিক, বিদেশ খাটা, ব্রাহ্মণবার বিস্ফোরণ, মিস্ত্রীর কাজ, মুর্শিদাবাদ, শিশু শ্রমিক

এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন এই প্রতিবেদনটি প্রিন্ট করুন

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

অনুসন্ধান করুন

সংবাদ মন্থন

  • ছিটমহল
  • মাতৃভূমি লোকাল

খবরের মাসিক সূচী

মেটা

  • Log in
  • Entries feed
  • Comments feed
  • WordPress.org

সাম্প্রতিক মন্তব্য

  • TG Roy on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প
  • Subrata Ghosh on স্বনির্ভরতায় উজ্জ্বল ‘শিশু কিশোর বিকাশ মেলা’
  • সুমিত চক্রবর্তী on ‘গুণগত মেশিন একটা মানুষকে মানসিক রোগী বানিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছে’
  • তীর্থরাজ ত্রিবেদী on লোককবি গুরুদাস পালের আত্মজীবনী : জীবন ও শিল্প

ফোরাম

  • আড্ডা
  • বিষয়ের আলোচনা
  • সংবাদ সংলাপ
  • সাংগঠনিক আলাপ

লে-আউট সহায়তা

সংবাদমন্থন প্রিন্ট >>
 
নমুনা ল্যাটেক>>

songbadmanthanweb [at the rate] gmail.com · যোগাযোগ · দায়দায়িত্ব · Log in