সৌম্য সেনগুপ্ত, রাধানগর, বাঁকুড়া, ৮ সেপ্টেম্বর#
৫-৬ সেপ্টেম্বর বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরের নিকট রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হলো আগ্রহী শিক্ষিকা, শিক্ষক ও বিজ্ঞানকর্মীদের নিয়ে স্বল্প ও বিনামূল্যের সামগ্রী দিয়ে হাতে কলমে বিজ্ঞান শীর্ষক কর্মশালা।
রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয়, রাধানগর ছাত্রছাত্রী ও গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় ও ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির রাধানগর শাখার উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এই কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজিয়ামের প্রাক্তন অধিকর্তা এবং দূরদর্শনের বিখ্যাত বিজ্ঞান অনুষ্ঠান ‘কোয়েস্ট’ এর প্রযোজক সমর বাগচী এবং প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি অধ্যাপক বীরেন্দ্রনাথ দাস।
এই কর্মশালায় ৬ জেলার শিক্ষিকা শিক্ষক ও বিজ্ঞানকর্মী সহ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, খড়্গপুর আইআইটির ছাত্র ও আরজিকর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রও।
অসাধারণ দক্ষতায় একেবারে ফেলে দেওয়া বোতল, সিরিঞ্জসহ সুলভে হাতের সামনে পাওয়া নানা জিনিস ও অত্যন্ত কম দামের কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে সমরবাবু ও ড. দাস শেখালেন যে হাতে কলমে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা মাধ্যমে পদার্থবিদ্যার নানা নিয়ম — নিউটনের গতিসূত্র, ঘর্ষণ, চুম্বকত্ব, চাপ, বল, আলোক, আর্কিমিডিসের সূত্র, বার্নোলি নীতি, তরলের সমোচ্চশীলতা, মাধ্যাকর্ষণ — এইসব নানা বিষয় কত সহজে কত সঠিকভাবে ও পদ্ধতিতে শিশুদের শেখানোর পাশাপাশি নিজেরাও শেখা যায়।
ওনারা বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা শুনি, আমরা ভুলে যাই; আমরা দেখি, আমরা মনে রাখি; আমরা করি, আমরা বুঝতে পারি’। শুধু তাই নয়, ওনারা নানা পরীক্ষামালার মাধ্যমে দেখান, কত বিষয়ের ব্যাখ্যা আমরা ভুল জানি। যেমন আমরা প্রায়ই ভাবি, বস্তু পৃথিবী থেকে অনেক দূরে চলে গেলে বস্তুটি ওজনহীন হয়। তাই মাহাকাশযানের ভেতর মহাকাশচারী ভেসে বেড়ান কারণ মহাকাশচারীর ওপর পৃথিবীর কোনো বল ক্রিয়া করে না।
ড. দাস বলেন, ‘তাই যদি হবে তবে অত বড়ো চাঁদ পৃথিবীর থেকে আরো দূরে থেকেও পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে কীভাবে?’ আসলে কিছুই না। মহাকাশচারী ও মহাকাশযান একই সাথে পৃথিবীর ওপর ক্রমাগত পড়েই চলেছে। আর আমরা জানি পতনশীল বস্তুর ওজনহীন অবস্থা তৈরি হয়।
সাথে সাথে তিনি পতনশীল বস্তুর মধ্যে ওজনহীনতার প্রমাণ কিছু মনোগ্রাহী পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের শেখান।
ওনারা বার বার বলেন, আসুন, আমরা শিশুদের সমস্ত কিছু হাতে কলমে করে তবেই তা সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আসার যে পদ্ধতিমালা তার অভ্যাস গড়ে তুলতে সচেষ্ট হই।
কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে রাধানগর উচ্চবিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নমুনা ক্লাস পরিবেশিত হয় এবং দ্বিতীয় অর্ধে ‘হাতে কলমে’ অংশে সকলে নানা পরীক্ষা হাতে কলমে করে দেখান। কর্মশালার বিভিন্ন সময়ে মানবতার গান পরিবেশন করেন গোপাল সেনগুপ্ত ও সৌম্য সেনগুপ্ত এবং ছোট্ট মহুল। সব শেষে এই বিষয়টিকে কীভাবে আরো বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, প্রতিটি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের অংশগ্রহণ করানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়। এবং সকলে সিদ্ধান্তে আসেন, উৎসাহী শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়ে বাঁকুড়া জেলার একদল রিসোর্স পার্সন গড়ে তুলতে হবে যারা এই কাজটি নানা স্কুলে সম্পাদন করবেন।
সংগঠনের পক্ষ থেকে আগামী দিনে আরো এমন কর্মশালা করার কথা বলা হয়। কারণ কুসংস্কার মুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক মনন গড়ে তুলতে ‘বিজ্ঞান’কে হাতে কলমে বোঝা ও শেখা অত্যন্ত জরুরী। পুরো অনুষ্ঠানটি ভিডিও রেকর্ডিং হয়েছে। আগ্রহী পাঠক তা পেতে সংগঠকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
যোগাযোগ : bboys.radhanagarbranch@gmail.com, 9474565047
Soumya says
আসুন আমরা সকলে বিজ্ঞান কে শিশুদের কাছে আনন্দ দায়ক এবং মনোগ্রাহী রূপে হাজির করি। এবং ওদের সঠিক রূপে বিজ্ঞান মনস্ক করে তুলি।