শমিত, শান্তিপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর#
গোটা রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদন হয় নদীয়া ও মুর্শিদাবাদে। বর্তমানে দর যা দাঁড়িয়েছে, কুইন্টাল প্রতি ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা, তাতে এবার পাটচাষিদের মাথায় হাত পড়বে। গত মরশুমে চাষি ২০০০-২১০০ টাকা দাম পেয়েছিল প্রতি কুইন্টালে। এবার চাষের খরচ অনেক বাড়লেও পাটচাষির ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর।
শান্তিপুর ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের গুপ্তিপাড়া ঘাট অঞ্চলের গণেশ মণ্ডলের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এবছর এক বিঘা জমিতে পাটচাষের খরচা হয়েছে ৫৫০০ থেকে ৬০০০ টাকা। নিজের মজুরি ধরলে খরচ দাঁড়াত ৮০০০ টাকা। এবং পরিশ্রম বাদ দিয়ে একবিঘে জমি থেকে ৫ হাজার টাকার বেশি খরচা উঠবে না এবার।
জানা গেল, বিঘা প্রতি নিজেদের পরিশ্রম বাদে লোকসান প্রায় হাজার দুই তিন। এবছর স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত কম হওয়ায়, পাট কাটার খরচ অনেক বেড়ে গেছে। পাট কাটা ও তারপর জলে ফেলে পচানোর খরচ হয়েছে বিঘে প্রতি আঠারোশো টাকা। চাষের খরচ না ওঠায় চিন্তায় চাষির মাথায় হাত পড়েছে। এবছর বোরো ধান চাষ করে চাষি লাভের মুখ দেখেনি। তারপর পাটচাষেও এই অবস্থা। চাষিরা যাবে কোথায়? এবছর নদিয়াতে আগস্ট পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের ঘাটতি ছিল ১৬ শতাংশ। তারপর সামান্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। খাল বিল নয়ানজুলিগুলিতে জল যথেষ্ট কম থাকায় চাষিদের পাট পচাতে যথেষ্ট বিপাকে পড়তে হয়েছে। শান্তিপুর ব্লকে প্রায় আশি থেকে নব্বই শতাংশ জমিতে পাটচাষ হয়। বৃষ্টিপাত কম হওয়ার জন্য চাষিরা পাট কেটেছেন বেশ দেরি করে। ঘরের কাছে জল না হওয়ায় পাট পচানোর খরচ এবছর দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে পাট ১০০ থেকে ১১০ দিনের মধ্যে পচাতে দেওয়ার কথা সেখানে কোথাও কোথাও ১৫০ থেকে ১৭০ দিন জমিতে পাট রয়ে গিয়েছিল। অথচ পাট কেটে অন্য শস্য বোনার দিনও ক্রমশ এগোতে থাকায় জল না পেয়ে তড়িঘড়ি পাট কেটে জমিতে গাঁট বেঁধে পড়ে রইল বেশ কিছু দিন। দ্বিগুন খরচ দিয়েও এবার জলে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে। পাট পচাতে জল লাগে সাধারণত বিশ থেকে পঁচিশ দিন। এবং প্রতি কেজি পাট পচাতে জল লাগে প্রায় ৩০-৩৫ লিটার।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে পাঁচ থেকে দশদিনের মধ্যে ২-৩ লিটার জলে রাসায়নিক মিশিয়ে পাট পচানো যায়। কিন্তু সেই কারিগরি ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে না প্রায় কোনো চাষি। এক সপ্তাহের মধ্যে নব্য কারিগরিতে যেখানে চাষির ঘরে পাট উঠে যাওয়ার কথা, সেখানে প্রতি বছরই পাট নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় চাষিকে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব রিসার্চ অন জুট অ্যান্ড অ্যালায়েড ফাইবার টেকনোলজি কারিগরি কি সোনালি তন্তুর কোনো সুসংহত সমাধান করতে পারে না? রাজ্য কৃষি দপ্তর ও জুট কর্পোরেশনের কর্তাদের কি এ ব্যাপারে কোনো দায়িত্বই নেই?
সে কারণে গণেশ মণ্ডলের মতো বহু চাষির আক্ষেপ, পাট এবার ‘বাঁশ’ হয়ে যাবে।
Leave a Reply