বঙ্কিম, ১৩ জানুয়ারি#
এ নিয়ে বলতে বলতে শুনতে শুনতে রবিবারের শীতের বেলা গড়িয়ে এল। শতাধিক মানুষ এসেছিল। কত শত ভাব ও ভাবনা নিয়ে। তারা পাখিদের দেখে-জানে-বোঝে, পাখিদের ছবি তোলে, পাখিদের কথা লেখে। কেউ বা পাখিদের পোষে। দেশের বন্যপ্রাণ আইনে তো পাখি পোষা নিষিদ্ধ। তবে কি ভালোবাসার খাঁচায় বদ্ধ পাখির প্রজনন এক সৃষ্টিশীল উত্তেজক কর্মসাধন নয়। সভায় এক বিজ্ঞানী তো ‘হিল ময়না’ প্রসঙ্গে বলেই দিলেন — আপেল আঙুর খাইয়ে বড়ো করা পক্ষীছানা ছত্তিশগড়ের জঙ্গলে জীবনে দুদিনও সারভাইভ করবে না, মিউজিয়ামের ফসিল হয়ে ফিরে আসবে। এভাবে প্রজাতি সংরক্ষণ করা যাবে না। প্রাকৃতিক স্বাভাবিক আশ্রয়গুলি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই উন্নয়নের ধাক্কায়। তাতে অনেক বড়ো বড়ো কিছু হচ্ছে, কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে কত কী কত ভাবে!
গোবরডাঙার কাছেই বওরে (জলাভূমি) এই কিছুদিন আগে কত শত পানকৌড়ি বাসা বেঁধেছিল। অথচ এই বওরও তো বিপন্ন। নিত্যনতুন ঝাঁ-চকচকে বাড়ি উঠছে। সেখানে চড়াই পাখিদের আশ্রয় নেই, ওদের খাবারও নেই। একজন বলছিলেন, হঠাৎ রাস্তায় কিছু চড়াই পাখির দল দেখা গেল। ওরা এখানে টিকে আছে কীভাবে? না দেখি, সামনে রেশনের দোকান।
ক্ষুধার্ত পাখিরা রেশন দোকানে ভিড় করেছে। চটের বস্তা বদলে প্লাস্টিকের বস্তা হয়েছে। তা থেকে তো সহসা শস্যদানা পড়ে না, এখন তবে ওরাই বা খাবে কী? তালগাছ সব হারিয়ে যাচ্ছে তো বাবুই পাখিরা কোথায় যায়? আমাদের রাজ্যে প্রায় ৮৫০-এর মতো প্রজাতির পাখি আছে। আছে কি? জানা দরকার, বোঝা দরকার। লোকজ্ঞানের সাথে কেতাবি জ্ঞানের যোগ দরকার। যারা পাখিদের ভালোবাসে তাদের এক হয়ে কাজ করার আহ্বান রাখলেন দীপক কুমার দাঁ।
একটা বাচ্চা মেয়েও এসেছে সভায় বাবার হাত ধরে। ও ভালোবাসে পাখিদের। ওদের বাড়িতে অনেক অনেক পায়রা আছে। ক-দিন আগে তারা বীজতলার বিষাক্ত ধান খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ওরা সেইসব পায়রার পেট থেকে বিষাক্ত ধান বার করে তাদের ওষুধ খাওয়ায়। কেউ কেউ বেঁচেও যায়। তবে অনেক পাখিই মারা যায়। এই যে রাসায়নিক সার ও বিষে জর্জরিত বর্তমান কৃষি ব্যবস্থা, তার বিকল্পের কথা উঠে আসে সবাইকে নিয়ে বাঁচার জন্যই।
এই আসরে পক্ষীবিজ্ঞানী ডঃ সত্যচরণ লাহা (১৮৮৮-১৯৮৪) এবং পক্ষীবিদ সুলেখক অজয় হোম (১৯১৩-১৯৯২)-কে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। পাখিদের সম্বন্ধে বাংলাভাষায় লেখা অনেক বই একত্রে দেখার সুযোগ পাওয়া গেল। এজন্য গোবরডাঙা গবেষণা পরিষদের দরজা খোলা আছে। আরও কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে দীপক কুমার দাঁ-র সাথে (দূরভাষ ৯৪৭৪১৯২৭৯৯)।
Soumyakanti Jana says
এই আসরে আমন্ত্রিত ছিলাম। কিন্তু একটা জরুরি কাজে যাওয়া হয়ে ওঠেনি । সংবাদ পড়ে না যাওয়ার আক্ষেপ কিছুটা মিটল।