আজ সোমবার কলকাতার কলেজ স্ট্রিটে বাংলার মুখ পত্রিকার আড্ডার বিষয় ছিল চিট ফান্ড। উপস্থিত ছিলেন পরব, জনপথ, মন্থন, একক মাত্রা পত্রিকার বন্ধুরাও। আলোচনা উপস্থাপন করেন অনিন্দ্য ভট্টাচার্য। পরে অনেকেই তাতে অংশ নেন। তবে মেমারির সাতগাছিয়া বাজারের ণ্ণবসুন্ধরা পরিবার’ থেকে আসা যুবক সুব্রত পোদ্দারের অভিজ্ঞতার আলোচনা ছিল উৎসাহব্যঞ্জক। কেন চিট ফান্ডে গ্রামের সাধারণ মানুষেরা নিজেদের তাগিদে জড়িয়ে থাকে, তার একটি চিত্র তিনি তুলে ধরেন এই আড্ডায়। সেখানেই তিনি শোনালেন রেণু বাগ-এর কথা#
৪৫-৫০ বছর বয়সের রেণু বাগ। ভোরবেলা মাছের বাজারে গিয়ে প্রথম রেণুদিকে দেখেছি। ছ-সাত বছর আগের কথা। রেণুদি যখন মাছ ধরতে যাচ্ছেন, তখন বড়ো বড়ো মাছের আড়তদারেরা তাঁকে খিস্তি দিয়ে মাছ ধরতে বাধা দিচ্ছে। ভোর চারটে কি সাড়ে চারটে তখন। ণ্ণআগে সাড়ে তিন হাজার দিয়ে যা, তারপর মাছ তুলবি’। সাড়ে তিন হাজার টাকা ধার ছিল রেণুদির। সমস্ত খিস্তি উপেক্ষা করে তিনি বেহায়ার মতো ওদের কাছ থেকে আরও পাঁচ কেজি মাছ ভিক্ষা চেয়ে নিলেন। বললেন, ণ্ণআজকেরটা আজকেই মিটিয়ে দেব’।
২০০৭ সালে যখন আমরা আমাদের সংস্থা বাইরের লোকের ডিপোজিটের জন্য খুলে দিলাম, রেণুদি পাসবই করালেন। তখন ওঁর দু-টাকার পাসবই ছিল। দৈনিক ২ টাকা তাঁর জমা। পরের বছর রেণুদি পাঁচটাকার পাসবই করেছেন। তারপর নানান কাজে আর লক্ষ্য করিনি। দু-তিন মাস আগে একদিন দেখি রেণুদি নিচের ঘরে চেয়ারে বসে আছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ণ্ণরেণুদি ভালো আছো?’
— হ্যাঁ। এই তো একটা ম্যাচুয়িরিটি নিতে এসেছি।
— এই সাত হাজার কত টাকার।
— বলো কী! সাত হাজার!
— নতুন বই হয়েছে?
— হ্যাঁ, কুড়ি টাকার একটা বই করে দিয়েছি।
— দিদি, একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে? সব সময় তো তোমার সঙ্গে দেখা হয় না। এখনও কি ভোরবেলা খিস্তি খেতে হয়?
রেণুদি লজ্জায় পড়ে হাসতে লাগলেন।
— না-না। সেসব দু-তিন বছর আগেই মিটিয়ে দিয়েছি। আজ আমি এক টাকাও ধার করি না। যা মাছ কিনি নগদে।
Leave a Reply