সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, কলকাতা, ৩১ মার্চ#
দক্ষিণ কোরিয়ার পস্কো কোম্পানির ওড়িশার জগৎসিংহপুর প্রকল্পের জন্য পরিবেশ মন্ত্রকের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেয়েছিল ৩১ জানুয়ারি ২০১১। কিন্তু ৩০ মার্চ ২০১২ সেই ছাড়পত্র স্থগিত করল ‘জাতীয় সবুজ ট্রাইবুনাল’। তারা প্রকল্পটির ছাড়পত্র পুনর্বিবেচনা করতে বলল। বিচারপতি সি ভি রামালু এবং বিশেষজ্ঞ ড. দেবেন্দ্র আগরওয়াল ছিলেন বেঞ্চটিতে।
ট্রাইবুনালের পর্যবেক্ষণ, ‘… এত বড়ো একটা প্রকল্প, বিশেষত অন্য একটি দেশের সঙ্গে করা, তা পর্যাপ্ত গুরুত্ব নিয়ে বিবেচিত হয়নি। প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে সামগ্রিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করা হয়নি।’ এছাড়াও ট্রাইবুনাল পরিবেশ-ছাড়পত্র পুনর্বিবেচনার জন্য মীনা গুপ্তকে পুনর্নিয়োগ করার সিদ্ধান্তেরও কড়া সমালোচনা করেছে।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের জুলাই মাসে পস্কো পরিবেশ-ছাড়পত্র পেয়েছিল। তখন পরিবেশ মন্ত্রক ছিল প্রধানমন্ত্রীর অধীন। এই ছাড়পত্র দিয়েছিলেন মীনা গুপ্ত, তৎকালীন সচিব। পরে পস্কোর পরিবেশ ও বন ছাড়পত্র পুনর্বিবেচনার জন্য একটি চার সদস্যের কমিটি তৈরি হয় ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে, যার মাথায় বসানো হয় এই মীনা গুপ্তকে। সেই কমিটি দু’টি রিপোর্ট দেয়। মীনা গুপ্ত বলেন, পরিবেশ ও বন ছাড়পত্র বৈধ। বাকি তিনজনের রিপোর্ট বলে, ওইসব ছাড়পত্র অবৈধ। ৩১ জানুয়ারি ২০১১ কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবেশ মন্ত্রক ছাড়পত্র দুটি বৈধ বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ২০১১ সালের জুন মাসে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জাতীয় সবুজ ট্রাইবুনালে আবেদন করেন প্রফুল্ল সামান্তরে।
কী কী বিষয়ে ছাড়পত্র পুনর্বিবেচনা করতে হবে, তা-ও উল্লেখ করেছে ট্রাইবুনাল।
প্রথমত, ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে বার্ষিক ৪০ লক্ষ টন ইস্পাত উৎপাদনের প্রকল্পের জন্য। কিন্তু জমি ও জল বরাদ্দ হয়েছে পস্কো প্রস্তাবিত বার্ষিক ১২০ লক্ষ টন ইস্পাত উৎপাদনের কথা মাথায় রেখে। ট্রাইবুনাল জমি বরাদ্দের পরিমাণ কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, ওড়িশার সাধারণ মানুষের জন্য যে জল সরবরাহ হয়, এই প্রকল্পে সেই জল ব্যবহারের বদলে আলাদা করে পস্কোকে জলের উৎস তৈরির জন্য বলতে বলা হয়েছে।
তৃতীয়ত, পরিবেশ মন্ত্রক বলেছিল, প্রকল্পের বর্জ্যের পরিবেশগত প্রভাব ‘ভবিষ্যতে পরীক্ষা’ করা হবে। ট্রাইবুনাল গভীর উদ্বেগের সঙ্গে জানিয়েছে, জলাজমি ও ম্যানগ্রোভ বনের ওপর প্রকল্পের প্রভাব এবং সাইক্লোন হলে তখন কী দাঁড়াবে, এসব আগেভাগেই পরীক্ষা করতে হবে। এত বড়ো প্রকল্পের সামগ্রিক প্রভাব প্রথমেই পরীক্ষা করে তবে ছাড়পত্র দিতে হবে, একটা একটা বিষয়ের প্রভাব পরীক্ষা করে তৎক্ষণাৎ সেটার ছাড়পত্র দেওয়ার বিরোধিতা করেছে ট্রাইবুনাল।
ট্রাইবুনাল বলেছে, পরিবেশ ছাড়পত্র পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়া যতক্ষণ না সম্পূর্ণ হচ্ছে, ততক্ষণ প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে না। উল্লেখ্য, এই আদেশের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার এবং পস্কো সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে।
এদিকে সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি মিউঙ বাক-কে কথা দিয়ে এসেছেন, ওড়িশায় পস্কো প্রকল্প হচ্ছেই। এর তীব্র নিন্দা করেছে পস্কো প্রতিরোধ সংগ্রাম সমিতি, ৩০ মার্চ পাঠানো একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে।
Leave a Reply