সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ১৪ নভেম্বর#
পস্কো প্রতিরোধের গ্রাম ধিনকিয়াতে ৩ অক্টোবর ২০১২ তারিখে গ্রাম স্তরের পল্লি সভা বসে সিদ্ধান্ত নেয়, সংযুক্ত বনভূমি পস্কো প্রকল্পের অঙ্গীভূত করা চলবে না। পরদিন ৪ অক্টোবর লাগোয়া গ্রাম গোবিন্দপুরে আরেকটি পল্লি সভা বসে এবং একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মিটিং শেষ হওয়ার আগে পস্কো প্রকল্পের সমর্থকরা এবং সরকারি দলের সমর্থকরা সভা ভণ্ডুল করে দেয় এবং সেই সিদ্ধান্তের কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে চলে যায়। উল্লেখ্য, বন অধিকার আইন, ২০০৬ অনুসারে পল্লি সভা এবং গ্রামসভার অনুমোদন ছাড়া বনভূমি কোনো প্রকল্পের অঙ্গীভূত করা যায় না।
১৮ অক্টোবর ২০১২ ধিনকিয়া গ্রামে হাজার দুয়েক মানুষের উপস্থিতিতে পঞ্চায়েত স্তরের গ্রামসভা বসে এবং সিদ্ধান্ত নেয়, সংযুক্ত বনভূমির ওপর ধিনকিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত তার অধিকার দাবি করছে। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে সরকার জানিয়েছিল, বনভূমির ওপর স্থানীয় গ্রামসভা এবং পঞ্চায়েত স্তরের সভাগুলির অধিকারের আবেদন বিবেচনা করা শুরু হবে। সেই মোতাবেক ধিনকিয়ার গ্রামসভা সিদ্ধান্ত নেয়, জেলাস্তরের বনাধিকার কমিটিগুলি তাদের অধিকার লাগু করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিক। গ্রামসভা থেকে ধিনকিয়া গ্রামের পল্লিসভার সিদ্ধান্ত এবং গোবিন্দপুর গ্রামের অসমাপ্ত পল্লিসভার সিদ্ধান্তে সংহতি জানিয়ে গোবিন্দপুর পল্লিসভা ভণ্ডুল করে দেওয়ার ঘটনাটিকে ধিক্কার জানানো হয় এবং স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, এই ঘটনা বনাধিকার আইন, ২০০৬-এর বিরোধী। সেদিনের ঘটনায় জড়িত এবং উপস্থিত জেলাস্তরের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানানো হয় রাজ্যস্তরের বনাধিকার কমিটির কাছে।
৩ এবং ৪ অক্টোবরের দুটি পল্লিসভা এবং পরে ১৮ অক্টোবরের গ্রামসভার সিদ্ধান্ত পস্কো প্রকল্পের প্রতি স্থানীয় মানুষের বিরোধিতার প্রকাশ, তাই পস্কো প্রকল্প বাতিল করার দাবি জানিয়েছে পস্কো প্রতিরোধ সংগ্রাম সমিতি।
উল্লেখ্য, ১৭ অক্টোবর ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী পস্কোর ভারতীয় শাখার প্রধান ইয়ং ওন ইউন-কে আশ্বাস দেন, দু-মাসের মধ্যে তাদের জমি অধিগ্রহণ করে দেওয়া হবে এবং ইয়ং জানিয়ে দেন, জমি পেলেই কাজ শুরু করা হবে। ওড়িশার জগৎসিংহপুর জেলায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলে পস্কো ইস্পাত প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন ৪০০৪ একর জমি। ওড়িশা সরকার এর মধ্যে দুই হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছে, কিন্তু তার মধ্যে পস্কোর হস্তগত হয়েছে সাড়ে পাঁচশো একর। ২৩ অক্টোবর ২০১২ দক্ষিণ কোরিয়ান ইস্পাত কর্পোরেট পস্কোর ত্রৈমাসিক হিসেবে দেখা যায়, লাভ কমে গেছে ২৫ শতাংশ, বিশ্বব্যাপী মন্দার কারণে ইস্পাতের বাজার নেই। তড়িঘড়ি কোম্পানি সিদ্ধান্ত নেয়, নতুন বিনিয়োগ কমানো হবে বিশ্বজুড়ে।
Leave a Reply