সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ৩১ অক্টোবর#
পরিবেশ ও অধিকার আন্দোলনের কর্মী কুণাল গুহ রায় ১৪ জুলাই ২০১২ সকালে সাড়ে ন’টা নাগাদ দেখেন, তার এমটিএস কোম্পানির মোবাইল ফোনটি কাজ করছে না। পরে জানতে পারেন, রাজ্য পুলিশের সদর দফতর লালবাজার সাইবার ক্রাইম বিভাগের হস্তক্ষেপে কোম্পানিটি তার মোবাইল ফোনের সিমকার্ডটি ব্লক করে দিয়েছে। সাইবার ক্রাইম দফতরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, জোড়াসাঁকো থানায় তার বিরুদ্ধে ণ্ণতথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০০’-এর ৬৬এ ধারায় (ধ্বংসাত্মক বার্তা প্রচার, মিথ্যে বার্তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রচার করলে তিন বছর পর্যন্ত সাজা ও জরিমানা হতে পারে) একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। মামলাতে তার পরিচয় দেওয়া হয়েছে, তিনি ণ্ণদধিচি মোবাইল নিউজ লেটার’-এর সাধারণ সম্পাদক, যা তিনি মোটেই নন। এই মামলার ফলশ্রুতিতেই তার মোবাইল ফোনের সিম আটকানোর নির্দেশ। বস্তুত, আইনের ওই ধারায় কোনও পুলিশ বা প্রশাসনিক কর্তাকে কারোর সিম ব্লক করার অধিকার দেওয়া হয়নি, তবুও পুলিশ এই কাণ্ডটি ঘটিয়েছে। কুণালবাবু জোড়াসাঁকো থানায় খোঁজখবর করলে সেখান থেকে বলা হয়, ওপরওয়ালাদের নির্দেশে এই বিষয়ে কোনও তথ্য দেওয়া যাবে না। পরে আইনজ্ঞের সাহায্যে তিনি জানতে পারেন, জোড়াসাঁকো থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ৪ জুলাই একটি এফআইআর দায়ের করে জনৈক ওজাইর আহমেদ, তাতে বলা হয়, তিনি শান্তি বিঘ্নিতকারী বার্তা প্রচার করেছেন। কিন্তু কুণালবাবু যে বার্তাটি এসএমএস মারফত প্রচার করেছিলেন সেটি হল, ণ্ণমমতার সরকার সরকারের পয়সায় মুসলমানের ভোট কিনছেন। মুসলমান অঞ্চলে গিয়ে মুসলমান সাজছেন, ৯৯% মুসলমানের জন্য চাকরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। ইমাম মোয়াজ্জানদের মাসিক ভাতা দেবার কথা বলছেন। এই কাজগুলো সংবিধান বিরোধী।’ এফআইআর-এ পুরো বার্তা টি না তুলে প্রথম ১৬টি শব্দ তুলে অভিযোগ করা হয়েছে।
কুণালবাবুর বক্তব্য, এইভাবে মোবাইলের সিম কার্ড আটকানো সম্পূর্ণ বেআইনি, তার সামাজিক কাজকর্মকে আটকে দেওয়ার চেষ্টা, তার জীবনধারণ ও স্বাধীন মতপ্রকাশের সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। এই মর্মে তিনি একটি রিট পিটিশন করেন কলকাতা হাইকোর্টে ১২ অক্টোবর, তাঁর মোবাইলের সিম সচল করা এবং জোড়াসাঁকো থানায় তার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার চেয়ে। ১৭ অক্টোবর বিকেল পৌনে পাঁচটায় তিনি একটি ফোন পেয়ে বুঝতে পারেন, তার ফোনের সিম আবার সচল করে দেওয়া হয়েছে। সরকারি উকিল আদালতে জানান, তদন্তের জন্য সরকার সিমটি আটকেছিল। বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত উৎসবের ছুটি শেষের তিন সপ্তাহের মধ্যে সরকার পক্ষকে তাদের বক্তব্য জানাতে বলেছেন এবং তার এক সপ্তাহের মধ্যে কুণালবাবুকে তার জবাব দিতে বলেছেন।
Leave a Reply