পরমাণু বিদ্যুৎ ছিল জাপানের মোট বিদ্যুৎ ব্যবহারের ৩০ শতাংশ। কিন্তু একের পর এক পরমাণু চুল্লি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে জাপানের বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ যত দাঁড়াবে বলে ভাবা গিয়েছিল, ততটা দাঁড়ায়নি। এরই মধ্যে জাপানে গ্রীষ্ম ও শীত, সবই অতিবাহিত হয়েছে।
সরকারি নির্দেশ ও পরিচালনায় জাপানের বাসিন্দারা এবং শিল্পগুলি নিয়ন্ত্রিত বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু করেছে। জাপানে এই বিদ্যুৎ কম ব্যবহারের অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সেৎসুদেন’ বা ‘বিদ্যুৎ বাঁচাও’। ২০১২ সালের ১২ মার্চের একটি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সুনামির পরবর্তী এক বছরে ৬০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়েছে জাপানিরা (চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে যে সময় তখনকার হিসেব ধরলে)। ফুকুশিমার যে ৫টি চুল্লি পরমাণু বিপর্যয়ের কবলে পড়েছে, সেইরকম সাইজের ৭৫টি পরমাণু চুল্লি লাগে এই পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি করতে।
সরকার থেকে শিল্পগুলিকে বলে দেওয়া হয়েছিল, যারা ৫০০ কিলোওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে ১৫%।
লোকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়কারী এলইডি এবং সিএফএল বাতি ব্যবহার শুরু করে। টোকিওর ঝাঁ চকচকে গিঞ্জা এলাকায় বাতিগুলির তেজ কমিয়ে দেওয়া হয়। গরমকালে এয়ার কন্ডিশনারের বদলে কাগজের পাখা ব্যবহৃত হতে থাকে। ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী যখন ব্যবহৃত হচ্ছে না, তখন ‘স্ট্যান্ড বাই মোড’-এ না রেখে ‘পাওয়ার অফ’ করে রাখা শুরু হয়। অফিস কারখানায় অপ্রয়োজনে বড়ো বড়ো বাতি না জ্বালিয়ে ছোটো ছোটো বাতি জ্বালানো। স্যুট টাইয়ের মতো পোশাক না করে গরমের উপযুক্ত হালকা পোশাক ব্যবহার। এমনকী অফিসের সময় বদলে ভোরবেলা থেকে করা হয়, যাতে দুপুরের গরমে ছুটি হয়ে যেতে পারে। এসক্যালেটরে না চড়ে সিঁড়ি ভেঙে উচ্চতা ওঠা শুরু হয়। পরিবারগুলি প্রতিদিন জামাকাপড় না কেচে কয়েকদিন পরপর একসাথে কাচতে থাকে।
জাপানিরা এই ‘বিদ্যুৎ বাঁচাও’ অভিযানে স্বতস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছে। তাই ২০১২ সালে আর বাধ্যতামূলক ‘বিদ্যুৎ বাঁচাও’ থাকছে না। জাপানিরা অভ্যস্ত হয়ে গেছে, ফেলে ছড়িয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করতে।
নবীকরণযোগ্য শক্তি
২০১১ সালের আগস্ট মাসে জাপান সরকার নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎকে (বায়ুশক্তি, ভূগর্ভস্থ তাপশক্তি, জলবিদ্যুৎ, সৌরবিদ্যুৎ ও কৃষিজাত বিদ্যুৎ।) ভর্তুকি দিয়ে উৎসাহিত করতে একটি বিল পাস করায়। সেপ্টেম্বর মাসে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, ফুকুশিমার সমুদ্রে ভাসমান বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করবে। আপাতত পরিকল্পনা আছে ৬টি ২ মেগাওয়াটের প্ল্যান্ট বানানোর। ২০২০ সালের মধ্যে ফুকুশিমায় ৮০টি ভাসমান বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করার কথা চলছে। ২০১৩ সালের মধ্যে ফুকুশিমা ও মিয়াগি প্রদেশে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌর প্যানেল তৈরি করার জন্য কানাডার একটি সৌর কোম্পানির সঙ্গে কথা চলছে। এটি ২০১৩ সালের মধ্যেই চালু হয়ে যাবার সম্ভাবনা। সৌর সেল বিক্রি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায় ২০১১ সালে।
শমীক সরকার, কলকাতা, ১৫ মে
Leave a Reply