কংক্রিট তুলে ফেলে মাটি ফিরিয়ে আনার ডাক |
গর্গ চ্যাটার্হি, কেমব্রিজ, ১৭ সেপ্টেম্বর#
এই দুনিয়ায়ে চেনা ছবি দেখতে দেখতে সৌন্দর্যের ধ্যান ধারণা বদলে যায়। বদলে যায় বলেই, মাটিতে গাছের থেকেও টব -এ গাছের একটা আলাদা নান্দনিকতা দেখতে শিখি, সেই টব মাটির হোক বা প্লাস্টিক হোক। আসতে আসতে বুঝতে শিখি মাটির রাস্তা মানেই এঁদো, পাকা ফুটপাথ হলো প্রগতি, বাঁধাই করা জমি, যেখানে কংক্রিট দেখা যাবে, মাটি থাকবে না, সেটার একটা সৌন্দর্য অনেকের মতই আমি শিখেছি। সৌন্দর্যবোধের ব্যাপারটা কিন্তু ভয়ানক, কারণ আমি যাকে সুন্দর মনে করি, তা যদি আদতে ক্ষতিকারক হয়, তাহলে ক্ষতি জানলেও, আচরণ বদলানো শক্ত হয়। যেমন আফ্রিকায়ে কালো মানুষের শ্রম লুঠের মাধ্যমে উত্তোলন করা হিরে। আমরা অনেকেই জানি সেটা, কত দেশ উজার করা এর মুনাফা আসে কিছু মানুষের কাছে, কিন্তু তার ফলে মানসিকতা বদলায়ে না। হীরের জ্বাজ্জ্বল্য, তা দেখে চকিত হওয়া বদলায়ে না। এই এমন এক বন্দিদশা, যেখানে আমরা স্বেছায় বন্দী, এটা জেনেশুনে যে এই বন্দিদশায় আমার ক্ষতি, কিন্তু কারাগারের ভেতরটার প্রতি এমন অমোঘ টান তৈরি হয়েছে, যে বেরোতেও পারি না। এটা ভাববার বিষয়। ফিরে আসি কংক্রিট ও ফুটপাথ প্রসঙ্গে.
যে কেম্ব্রিজ শহরের সমবায়ে থাকি ( www.cambridgecoop.wordpress.com) সেখানে কয়েক বছর আগে স্থানীয় একজন মানুষ এসে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছিলেন। তিনি ভূ -গর্ভস্ত জলের স্তর নিয়ে চিন্তিত এবং তাই নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো ও জনমত সংগঠিত করে। তখুনি আস্তে আস্তে জেনেছিলাম, যে সুন্দর দেখতে সিমেন্ট -এ বাঁধানো, যে রাস্তা, ফুটপাথ, ইত্যাদি দিয়ে প্রাকৃতিক মাটি ঢেকে দেওয়া হত, এর ফলে বৃষ্টির জল মাটির নীচে পৌঁছতে পারে না, বয়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে মাটির তলায় জলের যে স্তর তা নামতে থাকে, যে ভাণ্ডার তা আস্তে আস্তে নিঃশেষিত হয়। ভারতবর্ষের মতো দেশ, যেখানে জল এত অপ্রতুল এবং ‘জল ধর, জল ভর’ ধরনের গালভরা স্লোগান দেওয়া হয়, সেখানেও একই ব্যাপার।
মার্কিন দেশ প্রাকৃতিক দিক থেকে বেশ ধনী। কিন্তু সেখানেও এই কেম্ব্রিজ শহরের এক বাসিন্দার থেকে এক ইমেল পেলাম। সেই ইমেল-এ এল এক ঝলক নির্মল বাতাস-এর মতো, তাই তা ভাগ করে নিতে চাই পাঠকদের সঙ্গে এই ব্যাক্তি ‘depave the way’ বা ‘পথ করো বাধাইমুক্ত’ নামের আন্দোলনের অংশ। এরা বাধাই করা নানা জায়গাকে বাধাইমুক্ত করতে চান। বিশেষত এমন সব জায়গা, যেগুলি বাধাই করার তেমন কোনও সুবিধে নেই। যথা, বাড়ির আশপাশ, গ্যারাজ থেকে পিচ রাস্তা অবধি গাড়িপথ। এই ধরনের জিনিস সমাজ, বিকল্প, ভবিষ্যত, পরিবেশ, সৌন্দর্য সম্বন্ধে আমাদের নানা ধারনাকে একদম উলটে দেয়। এই বাধাই মুক্ত করার এক অনুষ্ঠান এ তারা আমায় ডেকেছে। একজনের বাড়ির কিছু অংশ বাধাই মুক্ত করা হবে, বাড়ির মালিকদের সহযোগিতায়। করবে কারা? যারা ওখানে পৌছবেন, সকলে। তারা হাত লাগাবেন, সবাই একটু রেঁধে আনবেন, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টে খাটবেন, গল্প-আনন্দ করবেন, নতুন বন্ধু বানাবেন। সমমনোভাবাপন্ন মানুষের সাথে মিলবেন। দিনের শেষে ম্যাপল অ্যাভিনিউ-এর এই অংশটি হবে অ্যাসফল্ট মুক্ত। এই নিমন্ত্রণ আমাকে ভাবিয়ে তুলল, তাই পাঠকদের সাথে ভাগ করে নিলাম।
Leave a Reply