শমীক সরকার, কলকাতা, ২৮ ফেব্রুয়ারি#
হুইসল ব্লোয়ার সুরক্ষা বিল ২০১১, যা ২০১১ সালের ২৭ ডিসেম্বর লোকসভায় পাশ হয়েছিল, তা এবারের সরকারের সংসদ অধিবেশনের একদম শেষদিন ২১ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভায় পাশ হল। যদিও বেশ কিছু সংযোজনী ছিল, তবু সেসব ছাড়াই, কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই তাড়াহুড়ো করে পাশ হল এই বিল।
এই বিল আনা হয়েছিল জনগণের হিতার্থে সরকারি তথ্যফাঁসকারীদের সুরক্ষা দেবার জন্য। এক দশক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের ইঞ্জিনিয়ার সত্যেন্দ্র দুবে ‘গোল্ডেন কোয়াড্রিল্যাটারাল’ রাস্তা প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির কথা প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন। তিনি অনুরোধ করেছিলেন, অভিযোগকারী হিসেবে তার নাম যেন প্রকাশ না করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রক তার নাম প্রকাশ করে দেয় এবং তার পরিণামে ২০০৪ সালে তিনি খুন হন। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে অগণিত হুইসল ব্লোয়ার, সরকারি বা বেসরকারি, তাঁরা নিহত হয়েছেন, তাঁদের প্রোমোশন আটকে গেছে, হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এই বিলের ঘোষিত উদ্দেশ্য, তাদের সুরক্ষা দেওয়া।
যদিও এই আইন সেই সুরক্ষা প্রদানে কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ রয়েছে। প্রথমত, জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটি এই আইনের আওতায় বাইরে। কেন? সেখানে কি হুইসল ব্লোয়ারদের সুরক্ষার দরকার নেই। দ্বিতীয়ত, দেশের সশস্ত্র বাহিনী, সামরিক বাহিনী এই আইনের আওতার বাইরে। তাছাড়া ‘অফিসিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট, ১৯২৩’-এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি এই আইনের আওতার বাইরে। এর মাধ্যমে দুর্নীতির বেশ কিছু বড়ো বড়ো আখড়াকে আড়াল করা হল।
নয়া সুরক্ষা আইনে সরকারি কর্মচারী বা কোনো ব্যক্তি বা এনজিও, সরকার বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো অর্থনৈতিক দুর্নীতি/অপরাধ ফাঁস করতে পারবে রাজ্য বা কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন, হাইকোর্ট, স্পিকার বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এরা সেই প্রতিষ্ঠানকেই নির্দেশ দেবে তিনমাসের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। কিন্তু মিডিয়ার কাছে বা জনপরিসরে (নিজস্ব ব্লগ, পত্রিকা, সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট প্রভৃতি) তথ্য ফাঁস করা হলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা বা তথ্যফাঁসকারীর নিরাপত্তা বিষয়ে কিছু বলা নেই।
তবে এই আইনে বলা আছে, তথ্যফাঁসকারীকে যেমন নিজের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ জানাতে হবে, তেমনি যার কাছে অভিযোগ জানানো হচ্ছে তিনি অভিযোগকারীর লিখিত অনুমতি ছাড়া অভিযোগকারীর নাম প্রকাশ করতে পারবেন না। করলে হাজতবাস পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া এই আইনে ই-মেলের মাধ্যমেও অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা আছে। আইনে রয়েছে, তথ্যফাঁসকারী যদি মনে করেন, তাঁকে অফিসে বা অন্য কোনোভাবে ওই তথ্যফাঁসের জন্য হেনস্থা করা হচ্ছে, তাহলে তিনি অভিযোগ জানাতে পারেন। প্রয়োজনে পুলিশ দিয়ে তথ্যফাঁসকারীর সুরক্ষা বিধানের কথাও বলা আছে নয়া আইনে।
নয়া হুইসল ব্লোয়ার সুরক্ষা আইনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিকটি হল : মিথ্যে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের দায়ে অভিযোগকারীর ২ বছর জেল ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা আছে। অভিযোগ প্রমাণিত না হলেই তাকে কি মিথ্যে অভিযোগ হিসেবে বিবেচনা করা হবে? এ বিষয়টি স্পষ্ট করা নেই। এর মাধ্যমে তথ্যফাঁসকারী নাগরিকের সুরক্ষার মোড়কে তাকে হেনস্থা করারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
Leave a Reply