ইসিএল (আসানসোল-দুর্গাপুর) ঠিকা শ্রমিক অধিকার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে সুদীপ্তা পালের প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ১৬ নভেম্বর#
২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডের বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের একটি মিটিংয়ে কোল ইন্ডিয়ার ঠিকা শ্রমিকদের নয়া বেতন কাঠামো নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত হয়। কোল ইন্ডিয়ার পাঁচটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন এবং কয়লা কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে ২০১০ সালে তৈরি হওয়া উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির পরামর্শের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত। বর্তমানে ঠিকা শ্রমিকরা যে মজুরি পায় এবং কয়লাখনির স্থায়ী শ্রমিকরা যে মজুরি পায়, এই নয়া বেতন কাঠামোটি তার মাঝামাঝি। প্রসঙ্গত, বর্তমানে কয়লাখনির ঠিকা মজুররা কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যুনতম মজুরি আইন (১৯৪৮) অনুযায়ী বেতন পায়, যা আদতে কয়লাখনি বাদে অন্যান্য সমস্ত ঠিকা শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য। নয়া বেতন কাঠামোতে সমস্ত ঠিকা শ্রমিকদের চারটি ক্যাটাগরিতে ভাগাভাগি করা হয়েছে — অদক্ষ শ্রমিকদের ৪৮৬ টাকা রোজ, আধা দক্ষ ৫২১ টাকা, দক্ষ ৫৫৬ টাকা এবং খুব দক্ষ শ্রমিকরা পাবে ৫৯২ টাকা রোজ।
যদিও এই বেতন কাঠামো একটা বড়ো অংশের শ্রমিকের জন্য মোটামুটি সম্মানজনক বেতনের বন্দোবস্ত, কিন্তু তা নানা কারণে শ্রমিকদের সামগ্রিক স্বার্থের পরিপন্থী। কারণ এই বেতন কাঠামোর মধ্যে দিয়ে লক্ষ লক্ষ ঠিকা শ্রমিক তাদের সম-কাজে-সম-মজুরির অধিকার ও স্থায়ী শ্রমিক হয়ে ওঠার অধিকার হারাচ্ছে। কোল ইন্ডিয়ার শ্রমিক বিরোধী নীতিরই নমুনা এটি, মতামত ইসিএল-এর ঠিকা শ্রমিক অধিকার ইউনিয়নের।
অন্যদিকে সস্তায় চুক্তি শ্রমিক (যাদের কোনো চাকরির নিশ্চয়তা নেই) নিয়োগের সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোল ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ কয়লাখনির স্থায়ী চরিত্রের কাজগুলো এদের দিয়ে করাবে এবং এর মধ্যে দিয়ে স্থায়ী শ্রমিকদের বাধ্য করবে স্বেচ্ছাবসর নিতে — অভিযোগ ঠিকা শ্রমিক অধিকার ইউনিয়নের। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব কোম্পানিগুলো অনেকদিন ধরেই ঠিকা শ্রমিক লাগিয়ে সমস্ত ধরনের কাজ করার অধিকার চাইছে। এই কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে তাদের কাজের অনেকটাই বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দিয়ে করিয়ে নেয়।
কোল ইন্ডিয়ার আউটসোর্স করে দেওয়া উৎপাদনের পরিমাণ তার মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশ ছিল ২০০৪-০৫ সালে, আর ২০১২-১৩ তে তা বেড়ে হয়েছে ৬০ শতাংশ। প্রায় ২০ হাজার ঠিকা শ্রমিক কাজ করে ইসিএলের ভূগর্ভস্থ খনিতে, খোলামুখ খনিতে, বিভিন্ন কর্পোরেট অফিসে ও গেটের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে।
‘অধিকার ইউনিয়ন কোল ইন্ডিয়ার এই শ্রমিক বিরোধী নীতির বিরোধিতায় আন্দোলন করে আসছে এবং সম-কাজে-সম-বেতনের দাবি করে আসছে। একই সাথে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির কিছু পরামর্শ আছে, যা কয়লা শিল্পের সাথে জড়িত ঠিকা শ্রমিকদের অবস্থার কিছুটা উন্নতি করতে সক্ষম। তাই আমরা তাদের সুপারিশ করা বেতন কাঠামো ইসিএল-এর সমস্ত খনিতে অবিলম্বে লাগু করার আন্দোলন করছি। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সিদ্ধান্তগুলো ১ জানুয়ারি ২০১৩ থেকে রূপায়িত হওয়ার কথা। কিন্তু পাটমোহনা এবং কালিদাসপুর কোলিয়ারিতে যথাক্রমে এবছরের মে ও জুলাই মাসে লাগু হওয়া ছাড়া আর কোথাওই নয়া বেতন কাঠামো চালু হয়নি।’
‘ইসিএলের ঠিকা শ্রমিকরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কোল মাইন প্রভিডেন্ট ফান্ড রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, বোনাস এবং মেডিক্যাল সুযোগ-সুবিধাগুলোও পাচ্ছে না।’
২০১৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে আন্দোলন করে আসার পরও নয়া বেতনকাঠামো লাগু না হওয়ায় ণ্ণঅধিকার ইউনিয়ন’ ১০ নভেম্বর থেকে অনশন আন্দোলন শুরু করে ইসিএলের সিএমডি অফিসের সামনে। ইসিএলের ডিরেক্টর পার্সোনেলের সঙ্গে ২২ নভেম্বরের মধ্যে এ বিষয়ে কথা বলার প্রতিশ্রুতি আদায়ের পর চারদিনের দিন অনশন উঠে যায়।
আপডেট : কর্তৃপক্ষ খনিতে যারা কাজ করে তাদের জন্য নয়া বেতনক্রম চালু করতে রাজি হলেও ঠিকা নিরাপত্তাকর্মীদের জন্য এই বেতনক্রম চালু করতে রাজি নয়।
Leave a Reply