নোনাডাঙায় উচ্ছেদ হওয়া বস্তির ঘরগুলো আবার নতুন করে গড়ে উঠেছে। আর সেই মাঠটা, যাকে প্রাথমিকভাবে টিন দিয়ে ঘেরা হয়েছিল, সেটাকে এবার ইট বালি সিমেন্ট দিয়ে পাঁচিল তুলে ঘেরা হচ্ছে। মাঠের তিনদিকে তিনটি ফ্লেক্স-এর ব্যানার টাঙানো হয়েছে — শহরের গরিবদের জন্য এখানে আবাসন গড়ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। উচ্ছেদ প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মীরা প্রশ্ন তুলছে, এই ফ্লেক্স-এর ব্যানার লাগানোর মানে কি? তবে কি নোনাডাঙার ৮০ একর জমি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স-এর জন্য দিয়ে দেওয়ার কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণেই এই ব্যানার?
নোনাডাঙার বস্তির বাসিন্দাদের যৌথ রান্নাঘর চলছে, কলকাতার বৃহত্তর জনসমাজ এই রান্নাঘর চালানোর জন্য চাঁদা দিয়ে সাহায্য করছে।
গত সপ্তাহে রুবি মোড় থেকে নোনাডাঙা অবধি একটি মিছিল হয়েছে নোনাডাঙা সংহতি মঞ্চের ডাকে। সেই মিছিলের পর নোনাডাঙার বাজারে একটি সভা হয়। সেই সভায় বক্তব্য রাখে সেখানকার পুনর্বাসনের ফ্ল্যাটের কিছু বাসিন্দা। তারা বস্তিবাসীদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে। মিছিল এবং সভা ঘিরে ছিল পুলিশ।
সভায় বিভিন্ন বক্তা পুনর্বাসনের ফ্ল্যাটবাসী এবং বস্তিবাসীদের ঐক্যের দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করে। সরকারি প্রস্তাবে যেখানে বলা আছে, নোনাডাঙার আশি একর জমি বাণিজ্যিক সংস্থাকে দিয়ে দেওয়ার কথা, তখন পুনর্বাসনের ফ্ল্যাটবাসীরাও নিরাপদ নয়।
এদিকে পাঁচিল যত এগোচ্ছে, উচ্ছেদ করা বস্তির বাসিন্দাদের আশঙ্কাও বাড়ছে। বস্তিগুলির ঘাড়ের কাছে ফেলা হয়েছে বিশালাকার জলের পাইপলাইন। প্রতিরোধ আন্দোলনের কর্মী এবং মজদুর পল্লির বাসিন্দা, হাজতবাস করে আসা পূর্ণ মণ্ডল নোনাডাঙা বাজারের সভায় বললেন, তাঁরা রাতে পাহারা দিচ্ছেন। তাঁদের আশঙ্কা, পুলিশ হয়ত রাতের বেলা তাঁদের ঘরে অস্ত্র ঢুকিয়ে দিয়ে পরদিন সকালে মাওবাদী বলে ধরে নিয়ে যাবে। তিনি তাঁর বক্তব্যে সরকারকে মানবিক হতে আবেদন জানান।
ফের ঘর বানিয়ে বসা শ্রমিক পল্লির বাসিন্দাদের অনেকে কাজে যেতে পারছে না আন্দোলন চলাকালীন। দিন আনা দিন খাওয়া অনেক ঘরেই এখন রান্না বন্ধ। যৌথ রান্নাঘর তাদের খাওয়ার জায়গা। অনেকেই বললেন, ফ্ল্যাট চাই না, আমরা যেভাবে আছি সেভাবেই থাকতে চাই। ফ্ল্যাটের পায়রার খোপের চেয়ে তাদের নিজেদের বানানো পায়রার খোপ অনেক ভালো।
শমীক সরকার, নোনাডাঙা, ১৩ মে, ছবি প্রতিবেদকের তোলা
Leave a Reply