নোনাডাঙার বস্তিবাসী এবং উচ্ছেদবিরোধী কর্মীরা ফের পুলিশি নিপীড়নের শিকার হল। গত ২০ জুন মজদুর ও শ্রমিক কলোনির বাসিন্দাদের সুষ্ঠ পুনর্বাসন, এবং নাগরিক পরিষেবার দাবি নিয়ে ধর্মতলায় একটি অবস্থান ধরনার আয়োজন করে উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। সকাল থেকে চলা ধরনা ঘিরে ছিল ব্যাপক পুলিশ বাহিনী। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম পুলিশের মাধ্যমে খবর পাঠান, সরকার নোনাডাঙার বস্তিবাসীদের সঙ্গে বসতে চায়, ২৬ জুন বসা হতে পারে। ধরনা থেকে পাল্টা জানিয়ে দেওয়া হয়, এই বর্ষায় পাঁচিল দিয়ে ঘেরা মাঠে, যেখানে বস্তিবাসীরা রয়েছে, সেখানে জল জমে যাচ্ছে। তাছাড়া পাঁচিলের যে বেরোনোর জন্য জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে, সেখানে একটা ময়লার ভ্যাট থাকার জন্য যাতায়াতের পথ পূতিগন্ধময় হয়ে রয়েছে। সেই ভ্যাটটা যেন সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু মন্ত্রী এরপর দেখা করার দিনক্ষণ নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন। পুলিশ মারফত আবার জানানো হয়, ২৬ জুন নয়, ৩ জুলাই দেখা করবেন মন্ত্রী। তারপর আবার ৩ তারিখও দেখা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় ছড়ায়, পুলিশ জানায়, মন্ত্রী পরে বলবেন, কবে দেখা করবেন। বাধ্য হয়ে ধরনা চালিয়ে যেতে থাকে উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি। ধরনা যখন সন্ধ্যে পেরিয়ে রাতের দিকে গড়াচ্ছে, তখন পুলিশ আচমকা ধরনার ওপর লাঠি চালাতে শুরু করে। বেশ কয়েকজন বস্তিবাসী মারাত্মক জখম হয়। শুধু লাঠি চালিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, এরপর এলোপাথারি গ্রেপ্তার শুরু হয়। সবমিলিয়ে ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যার মধ্যে বস্তিবাসী এবং উচ্ছেদ বিরোধী কর্মী — সবাই আছে।
অস্ত্র মজুত ছাড়াও যে সমস্ত ধারা ২০ জুন গ্রেপ্তার করা বস্তিবাসী এবং উচ্ছেদ বিরোধী কর্মীদের ওপর চাপানো হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ২৮৩ (পথ অবরোধ), ১৪৩ (বেআইনি জমায়েত), ১৪৯ (বেআইনি জমায়েত), ৩৫৩ (সরকারি কর্মীর কাজে বাধা প্রদান)।
এই পুলিশি অত্যাচার এবং অবিচারকে নিন্দা করেছে বিশিষ্ট জনেরা। মহাশ্বেতা দেবী সহ প্রায় ৫০ জন বুদ্ধিজীবী একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা গণতান্ত্রিক অধিকার এবং আইনকানুন লঙ্ঘনের নির্লজ্জ ঘটনাকে নিন্দা করছি। সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, অবিলম্বে নিপীড়নের পথ ছেড়ে দিয়ে উচ্ছেদবিরোধী কর্মীদের সঙ্গে বসে শান্তিপূর্ণ এবং সম্মানজনক সমাধান খুঁজে বার করুন।’
Leave a Reply