চুর্ণী ভৌমিক, কলকাতা, ৯ জুন। তথ্যসূত্র বিভিন্ন দক্ষিণ কোরিয়ার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম#
২০১১ সালে ফুকুশিমায় পরমাণু দুর্ঘটনার পরে পৃথিবী জুড়ে নানান দেশের মতোই দক্ষিণ কোরিয়াতেও পরমাণু বিরোধিতা বেড়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার নারী সংগঠনগুলি পরমাণু চুল্লির বিপদের ও সম্ভাব্য বিপর্যয়ের প্রশ্নগুলি তোলে। বড়ো বড়ো মিছিল হয় পরমাণুর বিরুদ্ধে। জাপানে পরমাণু বিপর্যয় ঘটার পর যখন তেজস্ক্রিয় কণা সারা উত্তর গোলার্ধে ছড়ায়, তখন একদিন দক্ষিণ কোরিয়াতে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। সেই সময় সেই বৃষ্টি, যা তেজস্ক্রিয় কণা মাটিতে বহন করে নিয়ে আসবে, তা থেকে বাঁচতে এক অভূতপূর্ব সক্রিয়তা লক্ষ্য করা গিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়াতে। মানুষের কাছে আরও পরিষ্কার হয়ে যায়, পরমাণু মানে কি? বড়ো বড়ো পরমাণু বিরোধী মিছিল সংগঠিত হতে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়াতে। পরমাণু চুল্লিগুলির হাল কি এবং ভবিষ্যতে কি হতে চলেছে, সেই নিয়ে সরকারের ওপর চাপও বাড়তে শুরু করে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সমগ্র শক্তির ৩০% পাওয়া যেত পরমাণু চুল্লিগুলো থেকে। ২৮ মে নিউক্লিয়ার সেফটি সিকিউরিটি কমিশন একটি জরুরি অধিবেশনে ঘোষণা করে যে সিঙরই এবং সিনওয়েলসিওং এর ১নং এবং ২নং চুল্লির সুরক্ষা ব্যবস্থায় গোলমাল রয়েছে। রিএক্টর চালু করবার আগে চুল্লির সমস্ত যন্ত্রাংশ পরীক্ষা করে নেওয়া হয়। এই চুল্লিগুলির বিশেষ কিছু তারে গণ্ডগোল রয়েছে যা পরীক্ষা র রিপোর্টে চেপে যাওয়া হয়েছিল। এই ভুল রিপোর্টের খবর ফাঁস হওয়ার পরপরই এই চুল্লিদুটি কিছুদিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যে তার দুটিতে গোলমাল আছে সেগুলি প্রায় ৫কিমি লম্বা, এবং সেগুলি পুনরায় সারিয়ে পরীক্ষা করে চালু করতে ৫–৬মাস সময় লেগে যাবে।
এর আগে গত বছর শেষের দিকে আরও দুটি চুল্লির নিম্নমানের যন্ত্রাংশের কারণে সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এখন দক্ষিণ কোরিয়ার ২৩টি পরমাণু চুল্লির মধ্যে দশটি বন্ধ। এগুলি ঠিকঠাক করে চালু করতে বেশ কয়েক মাস লেগে যাবে। ইতিমধ্যে শক্তি সঙ্কট শুরু হয়ে যাবে সারা দেশ জুড়ে স্বাভাবিক ভাবেই।
আরও চিন্তার ব্যপার এই যে, ২০০৮ সালে যে যন্ত্রাংশ যোগান দেওয়া হয়েছিল তার গোলমাল ধরা পরতে এতোখানি সময় লেগে গেল! ৫বছর ধরে এই চুল্লিগুলি চালু করার বা চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছিল অথচ Korea Hydro & Nuclear Power (KHNP) বা কোরিয়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা, কেউই এর কোন আঁচ পায়নি। এতদিন বাদে গুপ্ত সূত্রে খবর পেয়ে তবে খেয়াল পড়েছে। গুপ্ত সূত্রে খবর না পেলে ধরাও পরত না। সিঙ্গরির ৩নং এবং ৪নং চুল্লিতেও গোলমাল পাওয়া যাচ্ছে। যদি এই তারগুলি গোলমাল করত এর মধ্যে তবে পরমাণু জ্বালানি ঠাণ্ডা করা যেত না এমনকি বিকিরণ বাইরে বেরিয়ে আসতে পারত। রিপোর্টগুলি ভুল এবং ইচ্ছাকৃত এই ভয়ানক গরমিল যে সংস্থা ও ব্যক্তিরা করেছেন তাদের বিচার হবে বলে শোনা যাচ্ছে। KHNP-এর প্রধান কিম কিউন সিওপ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। ২৭ মে সংবাদ মাধ্যমের কাছে লি ইউন চেলের বক্তব্য শুনে বোঝা যায় যে আবারো এরম কিছু হলে হতেও পারে। কারণ তিনি বলেন যে বড়সড় গোলমাল না হলে ছোটখাটো কারচুপি ধরা বেশ মুশকিল।
প্রসঙ্গত ভারতের নির্মীয়মান কুডানকুলাম পরমাণু চুল্লিতেও নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহারের অভিযোগ আছে। এপ্রিল মাসে ওই চুল্লির কমিশনিং হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বেশ কিছু ভালভ খারাপ বেরোনোর পর তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে গেছে। কিন্তু চুল্লি বন্ধ করে দেওয়া হয়নি।
Leave a Reply