জিতেন নন্দী, মেটিয়াবুরুজ, ৫ জুলাই#
শবে বরাত মুসলমানদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হিজরি সালের শাবান মাসের পঞ্চদশ রাতে এ অনুষ্ঠান পালিত হয়। শব অর্থ রাত আর বরাত হচ্ছে সৌভাগ্য। অর্থাৎ শবে বরাত মানে সৌভাগ্যের রজনী। লোকে ওইদিন হালুয়া-রুটি তৈরি করে প্রতিবেশী ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে। আরিফ শেখ, ওর ছোটোআব্বা ফিরোজ শেখ আর চাচাতো ভাই জানারুল শেখ কলকাতায় মেটিয়াবুরুজ অঞ্চলে রাজমিস্ত্রি আর জোগাড়ের কাজ করে। ওদের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম থানায়। শবে বরাতের সময় ওরা এক সপ্তাহ বাড়িতে কাটিয়ে এল। আরিফ শেখের মুখে শুনলাম ওদের গ্রামে শবে বরাতের পরবের বিবরণ।
শবে বরাতের আগের দিন রাত সাড়ে দশটার সময় আমরা হাওড়া স্টেশন থেকে কবিগুরু এক্সপ্রেস ধরি। রাত তিনটের সময় সাগরদিঘি স্টেশনে নেমে মোটর-ভ্যান ধরে পৌঁছালাম নবগ্রামে। সেখান থেকে হেঁটে আমাদের নিমগ্রামে ঢুকলাম, তখন ভোর চারটে। ঘরে শবে বরাতের রান্না শুরু হয় বিকেল চারটে নাগাদ। হালুয়া তৈরি হয় অনেকরকম। বাদামের হালুয়া, ডিমের হালুয়া, পোস্তর হালুয়া, পেঁপের হালুয়া, ছোলার হালুয়া, গুড়ের হালুয়া, সুজির হালুয়া আর চালের রুটি। রান্না খাবার প্রথমে ফকিরদের মধ্যে বিতরণ করে খয়রাত করা হয়। ফকিররা আসে অন্য গ্রাম থেকে। আদিবাসীরাও আসে। নিমগ্রামের গরিবদের ঘরে আমরা খাবার নিয়ে যাই। সন্ধেবেলা আমরা যাই মাজারে বাতি জ্বালাতে। আমাদের গ্রামে দুটো মাজার, বড়োপীরের মাজার আর রহমানিপীরের মাজার। আমরা দুটোতেই যাই। এরপরে যাই কবরে। আমরা দাদু আর মেজোআব্বার কবরে গিয়ে জিয়ারত করেছি। এরপর আমরা ঘরে এসে হালুয়া-রুটি খাই। মেটিয়াবুরুজে যেমন বাজি-পটকা ফাটানো হয়, গ্রামে সেরকম হয় না। তবে বাচ্চারা ছররা-কাঠি জ্বালায়। কেউ কেউ রাত জেগে আল্লার কাছে ইবাদত করে। ক-দিন বাড়িতে কাটিয়ে আমরা আবার মেটিয়াবুরুজে কাজে ফিরে এসেছি।
Leave a Reply