কৃষ্ণেন্দু মণ্ডল, ব্যাতাইতলা, ২৪ জানুয়ারি#’
হাওড়া থেকে বি গার্ডেন গামী বাসে জি টি রোড ধরে যেতে শালিমার স্টেশনের কাছেই ব্যাতাইতলা বাজার। ব্যাতাইতলা বাজার বাসস্টপে নামতেই বাঁদিকে ব্যাতাই মন্দির আর ডানদিকে ব্যাতাই মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের গা দিয়ে ঢুকছে শরৎ চ্যাটার্জি রোড। একটু এগোলেই ডানদিকে মিল কাপড়ের মঞ্চ বেঁধে চলছে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ। কতগুলি হাতে লেখা, কতগুলি ছাপা পোস্টার। বিষয় — আশি ঘর বাসিন্দার পুনর্বাসন চাই, পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ চলবে না — ইত্যাদি।
দেখা হোলো পুরনো বাসিন্দা ধুনমুন চৌধুরির সঙ্গে। যে জমিতে প্রোমোটিং হবে, সেখানেই তার তিন পুরুষের বাস। নিজস্ব পাকা বাড়ি, চটি জুতোর দোকান। তার নিজের কথায়, —-
‘বাবা রাজকুমার চৌধুরি ঠাকুর্দা রামপ্রীত চৌধুরি। আজ থেকে দেড়শো দুশো বছর আগে এই জমিতে গোরস্থান ছিল। আমার পূর্বপুরুষরা বন জঙ্গল কেটে এদিকে থাকতে আরম্ভ করেন। তা আজ থেকে দেড়শো বছর আগে। একসময় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন আমার পূর্বপুরুষ ও অন্য বাসিন্দাদের এই জমি লিখিতভাবে হস্তান্তর করে ওপার বাংলায় চলে যান। এই শরৎ চ্যাটার্জি রোডের ধারে আমাদের সত্তর ঘর বাসিন্দার এক পল্লি গড়ে ওঠে। এখন কমবেশি পাঁচশো জন মানুষ আছেন।
আমার ঠাকুর্দার সময়ে এলাকার এক প্রভাবশালী মানুষ চন্ডী বোসের সঙ্গে তাদের সখ্যতা গড়ে ওঠে। বিশ্বাস করে কোনও কারণে হস্তান্তরের কাগজপত্র ও জমির ডকুমেন্ট তার হাতে তুলে দেন। কিন্তু চন্ডী বোস বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তাদের ঠকান। জমি করে নেন তার স্ত্রী মমতা বোসের নামে।
আমরা ট্যাক্স দিতাম ২ টাকা করে। বছর তিরিশ আগে আমাদের উকুল বলল, মমতা বোসের নামে তো ট্যাক্স জমা পড়ছে। তোমরা ট্যাক্স দেওয়া বন্ধ করো। বন্ধ করলাম।
কিছুদিন আগে পঞ্চাশ লাখ টাকা দিয়ে এই জমি চন্ডী বোস মমতা বোসের ছেলে বিশ্বজিত বোস বেচে দিল প্রোমোটারের কাছে। আমরা জমি ছাড়লাম না। হুজ্জোতি আরম্ভ হলো। টাকা দিয়ে জমি দিতে না পারায় বিশ্বজিত দু মাসের জন্য জেলে গেল। এখন প্রোমোটার বলছে এ জমি আমার। বহুতল ফ্ল্যাট করব। প্রোমোটিং হোক, কিন্তু আমাদের চাই স্থায়ী থাকার জায়গা ও দোকানঘর (যার যার এই জমিতে দোকানঘর আছে)। প্রসঙ্গত যে দোকানে বসে কথা হচ্ছিল সেটা সোনা রূপোর দোকান। এ জমিতে আমাদের একটা ক্লাবঘর-ও আছে। অনেকেই পাকা ঘর তুলেছে। আমাদের নিজস্ব ইলেকট্রিক লাইন, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, র্যাশন কার্ড, প্যান কার্ড সবই আছে। আমরা উড়ে এসে জুড়ে বসা লোক নই। দেড়শ’ বছরের বাসিন্দা। এখানে এক নব্বই বছরের বৃদ্ধা মানুষ আছেন, তারা দেবী। তিনি অতীতের সাক্ষী। আমরা চাই আলোচনার মধ্যে দিয়ে সুষ্ঠু মীমাংসা হোক।
রাজনৈতিক দলগুলো এসেছিল, বলেছি পাশে থাকুন। কিন্তু কোনও ব্যানার টাঙাতে দিইনি।’
Leave a Reply