ডঃ সায়ন্তন ব্যানার্জি ও ডঃ জয়িতা ভৌমিকের পেপার থেকে নেওয়া হয়েছে। মৌলানা আজাদ মেডিকাল কলেজ, নয়া দিল্লি#
সম্প্রতি বিবিসি-নিউজনাইট প্রতিবেদনে ভারতের অসংখ্য অনৈতিক ওষুধের পরীক্ষার বিষয়টা সামনে এসেছে। বিষয়টার পোশাকি নাম ‘ড্রাগ ট্রায়াল’, এর মাধ্যমে ভারতে নতুন ওষুধ বাজারে বিক্রির ছাড় পাওয়া যায়। যাদের এই পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তারা এই বিষয়টা সম্বন্ধে অজ্ঞ। কিন্তু ইংরেজিতে চোস্ত ঝকঝকে চেহারার ডাক্তারবাবুর প্রতি গরিব এবং অনেক সময় লেখাপাড়া না জানা রোগীর অন্ধ বিশ্বাসকে কাজে লাগানো হয়, তাদের শরীরটাকে ড্রাগ ট্রায়ালে ব্যবহার করা হয়।
২০১২ সালের মে মাসে পার্লামেন্টের দুই কক্ষে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিষয়ক পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির তৈরি ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’-এর কার্যধারার ওপর ৫৯তম রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল। এ নিয়ে কোনো আলোচনা বা তর্ক সেখানে হয়নি। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন’-এর ঘোষিত লক্ষ্য হল, ‘ফার্মাসিউটিকাল ইন্ডাস্ট্রির আকাঙ্ক্ষা, দাবি ও চাহিদা পূরণ করা’। নতুন ড্রাগ বা ওষুধ সরকারি অনুমোদনের ক্ষেত্রে এই রিপোর্টে এক হাস্যকর অসঙ্গতির কথা উঠে এসেছে। এই অনুমোদন দেন ‘ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া’ বা ডিসিজিআই। দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ নতুন ওষুধের জন্য বিশেষজ্ঞের সুপারিশ তেমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বা তথ্য ছাড়াই ব্যক্তিগত উপলব্ধির ভিত্তিতে এসেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা বিশেষজ্ঞের সুপারিশের বয়ান হুবহু এক। এমনকী, তাতে ডিসিজিআই-এর পূর্ণ রূপের উল্লেখের ভুলও একেবারে মিলে গেছে। পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির নজরে এটা এসেছে। শুধু তাই নয়, কমিটি এটাও এই রিপোর্টে মন্তব্য করেছে, এই সুপারিশগুলির পিছনে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা ও বিশেষজ্ঞদের কোনো ‘অদৃশ্য হাত’ রয়েছে। তথ্য প্রমাণ দেখিয়ে দিচ্ছে, এক্ষেত্রে ‘ওষুধ প্রস্তুতকারী, অনুমোদনকারী সংস্থা ও চিকিৎসা-বিশেষজ্ঞদের একটা চক্র’ কাজ করছে। ওষুধের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের অনুমোদনের ক্ষেত্রে এধরনের অনৈতিক কাজকর্ম এক দারুণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
Leave a Reply