দীপংকর সরকার, হালতু, ৩০ জুলাই##
আপন খেয়ালেই গত ১৫ জুলাই বেড়িয়ে পড়েছিলাম বালী দেওয়ানগঞ্জের উদ্দেশ্যে। জায়গাটি হুগলি জেলার আরামবাগ থেকে গোঘাট থানার অন্তর্গত বালী গ্রাম পঞ্চায়েত ১৭ কিমি দুরত্ব। কলকাতা থেকে ১১০ কিমি হাওড়া থেকে ৬-৩২ মিঃ ট্রেনে তারকেশ্বর ৮-০৫ মিঃ পৌছে বাস স্ট্যান্ডে পৌছান যায় । যেখান থেকে সরাসরি বালী দেওয়ানগঞ্জ বাস ৯-৩০ মিঃ যায়। অন্যথায় ৮-৩০ মিঃ আরামবাগের বাস ছাড়ে। আরামবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে বালী দেওয়ানগঞ্জ যাওয়ার বাস পাওয়া যায় সকাল ৯-৫০ নাগাদ। আরামবাগ থেকে দামোদরপুর যাওয়ার বাসেও যাওয়া যায়। আরামবাগ থেকে বালী দেওয়ানগঞ্জ যেতে লাগে ৩৫ মিঃ।
আরামবাগ থেকে কিছুদূর এগিয়ে বাঁদিকে গ্রামের সরু উঁচু নিচু অসমান রাস্তা গেছে। একফালি সরু রাস্তা, দুদিকে চাষের জমি। দুধারে আলু ও পাট খেত। রাস্তার ধারে ছাড়ানো পাট জমিয়ে স্তূপ করা আছে। বাস থেকে নামতে হবে হালদারপাড়া বাসস্টপ। নেমে বাদিকে ঢুকতে হবে রাউতপাড়ার লালমাটির পথ ধরে। এখান থেকে হেঁটে যেতে হবে দশ মিনিট। বড়ো রাস্তা থেকে ভিতরে যত ঢুকবেন ততই অবাক হওয়ার পালা। গ্রামীণ লালমাটির মেঠো রাস্তা এঁকে বেঁকে গেছে। রাস্তার ধারে বালী গ্রাম পঞ্চায়েত ফলক লাগানো আছে। রাস্তার ধারে বিভিন্ন গাছের সারি। কোথাও শুকিয়ে যাওয়া গাছের ডালপালা জড়ো করা আছে। দুই তিনজনকে জিজ্ঞাসা করলাম পঞ্চমন্দির কোথায়। লোক দেখিয়ে দিল। কিছুদূর পর গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেখি পাঁচ যায়গায় অবস্থিত পঞ্চমন্দির। প্রথমে রাস্তার বাঁদিকে মঙ্গলচণ্ডী মন্দির। সামনে টিনে একচালা শেড দেওয়া। ৫০০ বৎসরের পৌরাণিক লাল ইটের মন্দির। এক মহিলা ভিতরে ঢুকে পুজো দিচ্ছিলেন। জিজ্ঞাসা করলাম প্রতিদিন পুজো হয়? তিনি বললেন প্রতিদিন হয়। পাশেই একটি ফলক থেকে জানতে পারলাম ১৪২৪ সালে এটি তৈরি করান সুরেন্দ্র রাউত মহাশয়। মন্দিরের অবস্থা ধ্বংসের দিকে। একটু এগিয়ে সামনের দিকে একটি খোলা যায়গায় পাশাপাশি দুটি মন্দির। একটি দুর্গা ও অন্যটি নারায়ণ। এই দুটির অবস্থাও শোচনীয় অর্থাৎ অবলুপ্তির পথে। কিছু বাচ্চা ছেলে মন্দিরের সামনে বারান্দায় বসে ক্যারাম খেলছিল।
মঙ্গলচণ্ডী মন্দিরে ১৩টি চূড়া ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এগুলি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। একটু উঁচু যায়গায় অন্য দুটি মন্দির লাল ইটের তৈরি, প্রায় অবলুপ্তির পথে। কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে। জোড়া মন্দিরের (দুর্গা ও নারায়ণ) সামনে একটি শিবমন্দির অনেক পরে তৈরি হয়েছে। এটির কোন স্থাপত্যশৈলী নেই।
এই অজানা অচেনা বাংলার মন্দির শৈলী স্থাপত্য অনাদরে আজ ধ্বংসের পথে। কিছু কিছু মন্দির আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া দ্বারা সংরক্ষিত। যেগুলি ধ্বংসের পথে সেগুলিকে সকলের নজরে আনতে হবে।
ফেরার পথে কিছুদূর একটি শিবকুটির দেখতে পেয়ে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণের জন্য। দেখে মনে হল সেটিও বেশ পুরোনো দিনের। ছবি তুলে ফিরে আসছি, এমন সময় পিছন থেকে সাইকেলে চেপে একজন ভদ্রলোক এসে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে (রামকৃষ্ণ গোল) বললেন, এই পঞ্চমন্দির ৫০০ বছরের পুরোনো। জানতে চাইলেন, আমি কোথা থেকে এসেছি। আমি বললাম, কলকাতা থেকে। আর বললাম, আপনাদের এই মন্দিরের ছবি নিয়ে গেলাম। আমাদের ওখানের একটি পাক্ষিক পত্রিকায় এ বিষয় লিখব।
বাসস্ট্যান্ডে এসে কিছুক্ষণ একটি চায়ের দোকানে বসলাম। দোকানি বললেন এখানে আরও অনেকে গাড়ি নিয়ে আসে এই পঞ্চমন্দির দেখতে। কিছুক্ষণ পর আরামবাগ যাওয়ার বাসে উঠলাম। সেখান থেকে তারকেশ্বর। এরপর ২-১৭ মিঃ হাওড়া লোকালে বাড়ি ফিরলাম। বাংলার হারিয়ে যাওয়া মন্দির স্থাপত্যের দর্শনে বিমোহিত হলাম আর মনে মনে ভাবলাম কীভাবে রক্ষিত হবে আমাদের ইতিহাসের সংস্কৃতি?
(সঙ্গের ছবি লেখকের তোলা)
Leave a Reply