শমিত, শান্তিপুর, ২৯ মে#
শান্তিপুর ব্লকের অন্তর্গত গ্রামাঞ্চলে এ বছরে কলাচাষের আধিক্য খুব বেশি চোখে পড়ছে। শোনা যাচ্ছে ধান চাষ ছেড়ে অনেক চাষি কলাচাষে ঝুঁকছে। ব্লকের ভালুকা বটতলা অঞ্চলের চাষি নারায়ণ মণ্ডলের সঙ্গে কথোপকথনে জানা গেল, ধানচাষের খরচ যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আর সামলানো যাচ্ছে না। কলাচাষে তবু কিছুটা পয়সার মুখ চাষিরা দেখতে পাচ্ছে। প্রতি কলাচারা তিন চারটাকা দামে কিনে মাস ছয়েক যত্ন করে পরিচর্যা করলে চাষের খরচ ও শ্রম বাদ দিয়ে কিছু টাকা চাষির হাতে থাকছে। তবে এবছর অত্যন্ত খরা হওয়ার জন্য চাষের খরচ বেশ বেড়ে গেছে।
সাধারণত কলাচাষিরা সবরি, কাঁঠালি ও চাঁপা কলার চাষই করে থাকে। ফসল উঠলে কাঁদি পিছু ২০০-২৫০ টাকায় তা বিকোয়। তবে কলা চাষে প্রতি দশ দিন অন্তর, প্রতি ঘন্টায় ১২০ টাকা দরে, বিঘা প্রতি চারঘন্টা জল দিতে হয়। এ বছর খরার জন্য এই বাড়তি খরচ কিছুটা বেশি। খুব ভালো চাষ হলে প্রতি কাঁদিতে ২৫০ থেকে ৩০০ টা কলা থাকে। চাষিরা সাধারণত কাছাকাছি কোনো আড়ত-এ তা বিক্রি করে। পুজো-পার্বণ ও বিয়ের মরশুমে কলার দাম ভালোই পাওয়া যায়। ছটপুজোর সময় কলার দাম সবচেয়ে চড়া থাকে, জানালেন নারায়ণবাবু। আবার বিশেষ বিশেষ সময় ওই কাঁদিই পঞ্চাশ টাকা দামে নেমে আসে।
এবছর রানাঘাট মৌজার গাজিপুর, তারাপুর তিলডাঙা হবিবপুর অঞ্চলে তিনশো থেকে চারশো একর জমিতে চাষিরা ধান ছেড়ে কলা চাষ করেছে। তবে বেশিরভাগই চাঁপাকলা। আমার ট্রেনের সহযাত্রী চাষিজীবী তারাচাঁদ বিশ্বাস জানালেন, তিনিও পাঁচ কাঠা জমিতে চাঁপাকলা চাষ করেছেন। তাঁর কাছ থেকে জানা গেল, খরার জন্য এ বছরে জলের পরিমাণ জমিতে বাড়াতে হয়েছে। ইউরিয়া পটাশ ফসফেট ১০-২৬ ও ১৫-১৫ সার এবং থিওডিন মিরাকেল ওস্তাদ — এই ওষুধের প্রয়োগে কলার চাষ করেছে অঞ্চলের চাষিরা। শুধুমাত্র জমি তৈরির সময় খোল ও গোবরের জৈব সার ছাড়া রাসায়নিক সার প্রয়োগ করেই কলা চাষ হচ্ছে। মোচ বা মোচা কেটে নেওয়ার পর কলাকে দেখনদারি ও পুরুষ্টু করতে স্প্রে করে ওষুধ দিতে হচ্ছে। এ বছর এতদঞ্চলে প্রচুর চাষি ধান ছেড়ে কলা বাদাম তিল গাঁদাফুল চাষের দিকেই ঝুঁকেছে। নারায়ণবাবু জানালেন, তিনি হাজার প্রতি দুশো টাকা দরে গাঁদা চারা কিনে তাঁর জমিতে লাগিয়েছেন। এ বছরই তিনি গাঁদা চারা চাষ করলেন।
Leave a Reply