এক মায়ের কোল থেকে বাচ্চা পড়ে যাওয়ার পর অটোচালকের অটো সঙ্গে সঙ্গে না থামানোকে ইসু করে বড়ো মিডিয়ার ‘দৌরাত্ম’ শুরু হল। ‘অটোর দৌরাত্ম’ তাদের একটা বিষয় হয়ে উঠল! বড়ো মিডিয়া ক্ষমতাবান। বিজ্ঞাপনের মোটা টাকার জোর, টিভির চ্যানেলের রেটিং বা খবরের কাগজের সার্কুলেশন আর পিছনে কর্পোরেট দাদাদের মাতব্বরি — তাদের ক্ষমতার উৎস। এই ক্ষমতার জোরে তারা বুদ্ধিজীবী আর রাজনৈতিক নেতাদের জুটিয়ে নেয় সঙ্গে। তারপর টার্গেট করে কখনো অটোচালকদের, কখনো ঠ্যালা-রিকশাওয়ালাদের, কখনো সাইকেলচালকদের, কখনো হকারদের, কখনো বস্তিবাসীদের। কিছু দোষত্রুটি থাকেই। কিন্তু সেটাকে প্রয়োজন মতো বড়ো করে ফেনিয়ে তোলা হয়। আবার প্রয়োজন মতো জলজ্যান্ত ঘটনাকে দেখেও না দেখার ভান করা হয়। কোথাও জোরালো আলো ফেলা, কোথাও অন্ধকার কায়েম রাখা — এইসব নিত্যনৈমিত্তিক কাণ্ডকে ঘিরেই মিডিয়ার পলিটিক্স — ক্ষমতার রাজনীতি।
পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত কলকাতার মতো শহরে প্রথমে সরকারি পরিবহণ ব্যবস্থাকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে ফেলা হয়েছে। তারপর শহরের রাস্তায় সাইকেল, ভ্যান, রিকশা চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যানবাহনের সেই অভাব পূরণ করে বেসরকারি বাস আর অটো। শহরের কোনো কোনো এলাকায় এবং মফস্বলে অটো ছাড়া নিত্য যাতায়াতের কথা ভাবাই যায় না। অটোর জন্য প্রতিদিন লম্বা লাইন দিতে হয় বিভিন্ন কাজের মানুষকে। এতরকম রুট, এত হাজার হাজার অটো — সেখানে নানারকম সমস্যা, বিশৃঙ্খলা লেগেই থাকে। কিন্তু সেই সমস্যাগুলিকে সামাজিক দৃষ্টি থেকে গুরুত্ব দেওয়ার বদলে অটোচালকদের ভিলেন বা খুনি হিসেবে চিত্রিত করা অত্যন্ত অমানবিক এবং অসামাজিকও বটে। একজন নিত্য অটোযাত্রী বলেছেন, আসলে এইসব ‘দৌরাত্ম’ ইত্যাদি মন্তব্য যারা করে, তারা নিজেরা প্রাইভেট কারে চেপে ঘুরে বেড়ায়। ট্রেনে বাসে অটোতে সাইকেলে বা পায়ে হেঁটে তাদের চলতে হয় না। তারা মনে করে, কী আছে! অটো যদি বন্ধ হয়ে যায়, ট্যাক্সি ধরে নেওয়া যাবে কিংবা একটা প্রাইভেট কার কিনে নিলেই হয়! এধরনের চিন্তার দৌরাত্ম বন্ধ হওয়া দরকার।
Leave a Reply