প্রদীপন ও উজ্জ্বল রাই, নিডাম চা বাগান, ৫ ডিসেম্বর#
মালবাজার রেলস্টেশন থেকে সামান্য দূরে নিডাম চা বাগান গত ৯ নভেম্বর বন্ধ হয়ে যায় শ্রমিক মালিক দ্বন্দের ফলে। এরপর ১৮ নভেম্বর জলপাইগুড়িতে আইটিপি দপ্তরে মিটিং হয়ে ১৯ নভেম্বর বাগান খুলে যায়।
বঞ্চনার সাতকাহন
বাগানের মূল ডিভিশন ও সুখানি ডিভিশন মিলে মোট শ্রমিক লাইনের সংখ্যা আট। স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৫৪৬। তাছাড়া ২৫০ ঠিকা শ্রমিক। এছাড়া স্টাফ এবং সাব স্টাফ মিলিয়ে আরও সত্তর জন রয়েছে। ২০০৮-৯ সালে মালিক পক্ষ চুক্তি সাক্ষর করে বলেছিল, প্রতিবছর তিরিশটি করে নতুন ঘর বানিয়ে দেবে শ্রমিকদের জন্য। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে যে, তারা বছরে ২-৩টি ঘরই বানিয়েছে।
আটটি শ্রমিক লাইনের একটি খাল লাইন। সেই খাল লাইনের বুদ্ধিমান ওঁরাও, যিনি বাগানের ডাকবাহকের কাজ করেন, তিনি জানালেন, বাগানের গর্ভবতী মহিলাদের মালবাজার নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স বা মাতৃযান-ও পাওয়া যায় না। বাগানের নিরাপত্তারক্ষী সুধু মুণ্ডার বক্তব্য, বাগান থেকে মাত্র আড়াই পিল (কাঠের আয়তনের মাপ) করে জ্বালানি কাঠ দেওয়া হয়। তাও নিম্নমানের। ভালো কাঠ বাগান কর্তৃপক্ষ বিক্রি করে দেয়। হেলথ সেন্টারের বেহাল দশা। তবে প্রাইমারি স্কুলটির অবস্থা তুলনামূলক ভাবে ভালো। শিক্ষকের সংখ্যা আট। এবং ছাত্রদের উপস্থিতিও ভালোই। পড়াশোনার বিষয়ে আগ্রহ বৃদ্ধি পেলেও উচ্চশিক্ষার হাল খারাপ। সংক্ষেপে এই হল বাগানের শ্রমিক মহল্লার চিত্র।
ধূমায়িত বিক্ষোভ
দীর্ঘদিনের বঞ্চনার ফলে বিক্ষোভ দানা বাঁধছিল শ্রমিকদের মধ্যে; এমনিতেই হাজিরা কম। সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। বিঘা বা ক্যাজুয়াল শ্রমিকেরা বছরের অধিকাংশ সময় কাজ পায় না। তার ওপর বাগানের ছোটোবাবু ঘোষণা করেন, শ্রমিকদের হাজিরা কাটা যাবে। ৮ নভেম্বর এই ফরমানের ফলেই শ্রমিকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ছোটোবাবুকে আক্রমণ করে। এবং মালিকপক্ষ সেই দিন রাতেই এই অজুহাতে চোরের মতো বাগান পরিত্যাগ করে, শ্রমিকদের ভবিষ্যতকে অন্ধকারে রেখে।
অপমানজনক সন্ধি
এরপর ১৮ নভেম্বর সিআইটিইউ, টিএমসি ট্রেড ইউনিয়ন, আদিবাসী বিকাশ পরিষদের উপস্থিতিতে যে সন্ধি হয় মালিকপক্ষের সাথে আইটিপির জলপাইগুড়ি দপ্তরে, তার ফলে বাগান খুলে যায়। সন্ধির শর্তগুলি হলো, ১) শ্রমিকদের দিনে ১৫০টির পরিবর্তে ৬০০টি কাজ প্রুনিং (চা গাছ ছাঁটা ও পরিচর্যা) করতে হবে। আট ঘন্টা পুরো কাজ করতে হবে। প্রয়োজনে সময়সীমা বাড়াতে হবে। এবং মাঝখানে কোনো বিরতি থাকবে না। তাছাড়া, ৮ নভেম্বরের শ্রমিক বিক্ষোভে আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত ৬ জন শ্রমিককে চারমাস বরখাস্ত করে রাখা হবে। সকাল সাতটায় কাজে আসার সময় সামান্য দেরি হলেও হাজিরা কাটা যাবে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো এই যে, বর্ষীয়ান ট্রেড ইউনিয়ন নেতা চিত্ত দে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকলেও, তার সামনেই এই শর্তগুলি হয়।
এই সন্ধি মোতাবেক গত ৫ ডিসেম্বর বাগান কর্তৃপক্ষ চারগুণ বেশি, অর্থাৎ ৬০০ গাছ প্রুনিং এর নির্দেশ দিলে এবং শ্রমিকদের কাজের সময়সীমা বিকেল চারটে করার কথা বললে, শ্রমিকরা পুনরায় ম্যানেজারকে ঘেরাও করে।
Leave a Reply