দিল্লির সংসদে সব দলের সাংসদেরা সমস্বরে জানালেন, দ্রুত মু-তোড় জবাব দেওয়া হোক পাকিস্তানকে। তাঁদের প্রতিবাদের ঝড়ে সংসদ সেদিনের মতো মুলতুবি রাখতে হল।
৬ আগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চ সেক্টরে পাঁচজন জওয়ান নিহত হওয়ার খবর পেয়েই এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিজেপি থেকে সিপিএম সমেত বিভিন্ন দলের প্রথম সারির নেতারা। ৭ আগস্টের খবরের কাগজ খুলতেই খবরটা চোখে পড়েছে সকলের। প্রথম শিরোনামেই পাঁচজন জওয়ানের দুঃখজনক মৃত্যুর এই খবর। মনে প্রশ্ন জাগে, কী ব্যাপার? কেন এই হত্যা? সেই ছোটোবেলা থেকে শুনে আসছি, পাকিস্তান ‘আগে’ ভারতকে আক্রমণ করেছে … ভারত শান্তিবাদী, কিন্তু নিরুপায় হয়ে ‘পরে’ তাকে পাল্টা আক্রমণ করতে হয়েছে, ইত্যাদি …। আমাদের দেশপ্রেম, দেশভক্তি, স্বাধীনতার বোধ এই জায়গাটা ঘিরে আবর্তিত হয়ে চলেছে গত ৬৭ বছর ধরে।
বড়ো বাণিজ্যিক সংবাদপত্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের খাতিরের সুবাদে নিমেষে এ নিয়ে অনেক তথ্য তারা জোগাড় করে ফেলে। কিন্তু আমাদের মতো ছোটো স্বাধীন সংবাদপত্র মুশকিলে পড়ে যায়। কারণ কোনোভাবেই সরাসরি ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়ে সরেজমিন খোঁজ নেওয়ার উপায় নেই। তাই বড়ো কাগজেই খুঁজে বেড়াই প্রকৃত তথ্য। তবে ইন্টারনেটের দৌলতে একটা সুবিধা এখন রয়েছে। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ঢুঁ মেরে খবরটাকে নানান দিক থেকে যাচাই করে নেওয়া যায়।
৭ আগস্টের বড়ো খবরের ভিড়ে স্টেট্সম্যানে দুটো ছোটো খবর ছিল। ১। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রান্তবর্তী অঞ্চলে এবং নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জুলাই-আগস্ট মাসে ভারতীয় জওয়ানরা ১৯ জন সন্ত্রাসবাদীকে হত্যা করেছে। ২। ৬ আগস্ট এই ঘটনাবলীর সম্ভাব্য বদলা হিসাবে ২০ জন ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভারতীয় জওয়ানদের ওপর আক্রমণ করেছিল। তারা ছিল সন্ত্রাসবাদী এবং পাক-সেনা। পরে সেদিনই সেনাবাহিনী প্রেস বিজ্ঞপ্তি বদল করে জানায়, ওই ২০ জন ছিল সন্ত্রাসবাদী এবং পাক-সেনার পোশাক পরা কিছু লোক। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও এই বিজ্ঞপ্তিকেই সমর্থন করেছিলেন। ৭ আগস্ট বিজেপির চাপে পড়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে জানান, ওই আক্রমণে ছিল খোদ পাক-সেনারাই।
বড়ো সংবাদমাধ্যমের মধ্যস্থতায় ভারতীয় প্রতিরক্ষা দপ্তর এবং সংসদের দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতারা হঠাৎ ৬ আগস্টের পাঁচ জওয়ানের হত্যার ঘটনাকে এত বড়ো করে সামনে নিয়ে এল, মনে হতেই পারে পাকিস্তান একতরফা ভারতের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। এটা সত্য নয়। আক্রমণের ঘটনাগুলো কিন্তু দ্বিপাক্ষিক।
সংবাদমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, ২৭ জুলাই পাকিস্তানি সেনা আসিম ইকবাল মারা গেছেন (সূত্র আইএসপিআর)। ৩০ জুলাই ৪ জন পাকিস্তানি অসামরিক ব্যক্তির ভারতীয় সেনার হাতে মৃত্যু (সূত্র ফার্স্টপোস্ট)। ৫ আগস্ট সীমান্তে গুলি বিনিময়ে ১ জন ভারতীয় সেনা জখম এবং ১১ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয় (সূত্র টাইমস অব ইন্ডিয়া)। ৬ আগস্ট ৫ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয় (সূত্র বিবিসি)। ১২ আগস্ট ১ জন পাকিস্তানি অসামরিক ব্যক্তির ভারতীয় সেনার হাতে মৃত্যু হয় (সূত্র এক্সপ্রেস ট্রিবিউন)। ১৪ আগস্ট ৬০ বছর বয়স্ক পাকিস্তানি অসামরিক ব্যক্তির ভারতীয় সেনার হাতে মৃত্যু হয় (সূত্র হিন্দুস্তান টাইমস)।
দেশপ্রেম মানে কি অর্ধসত্যের ওপর ভিত্তি করে ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠা?
samrat sarkar says
আমরা অনেক সময় সত্যিটা না জেনে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই। খবরটা পড়ে ভালো লাগলো।
সম্রাট সরকার
মদনপুর
নদীয়া