দুবরাজপুরের লোবা গ্রামে ডিভিসি এমটার কয়লা উত্তোলনের জন্য জমি অধিগ্রহণকে ঘিরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে টানাপোড়েন চলছিলই। গত সপ্তাহে এমটার পক্ষ নিয়ে পুলিশ গ্রামে ঢুকতে গেলে গ্রামবাসীরা বাধা দেয়, পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। ক্ষমতার বিভিন্ন স্তর, পুলিশ-প্রশাসন-সরকার-দলগুলির ভূমিকা নিয়ে কথা উঠছে, কিন্তু এসব ‘ক্ষমতার পেছনের ক্ষমতা’ কর্পোরেট মাইনিং অপারেটর এমটার ভূমিকা ততটা আলোচনায় নেই। সেই ক্ষমতা নিয়ে সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, কলকাতা, ১১ নভেম্বর#
কর্পোরেট এমটা-র বিজ্ঞাপন
১৯৯৪-৯৫ সালে বামফ্রন্ট শাসিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন-এর সাথে যৌথ উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু। এখন এমটা-র যৌথ উদ্যোগ কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের সাথে এবং ডিপিএল, ডিভিসি, টিভিএন নামক আরও তিনটি সরকারি সংস্থার সাথে। পাঞ্জাবের সাথে যৌথ উদ্যোগ হয় ১৯৯৭ সালে আকালি দল সরকারের আমলে, কর্ণাটকের সাথে হয় ২০০২ সালে যখন কংগ্রেস সরকার, ২০০৩ সালে হয় ঝাড়খণ্ডের অর্জুন মুণ্ডার বিজেপি সরকারের সাথে, আর ২০০৭ সালে বিজেপি শাসিত হিমাচলের সাথে।
এমটা এই সব যৌথ উদ্যোগের সবগুলিরই ৭৪ শতাংশ শেয়ার হোল্ডার এবং তাদের উপস্থিতি মাইনিং অপারেটর হিসেবে। কয়লা খনি জাতীয়করণ আইন অনুযায়ী প্রাইভেট সংস্থার সাথে যৌথ উদ্যোগে গেলে সর্বোচ্চ ওই ৭৪ শতাংশ শেয়ারই সেই প্রাইভেট সংস্থাকে দিয়ে দিতে পারে কোনও সরকারি সংস্থা। তাই সরকারি সংস্থাগুলি কয়লাখনি ব্লকের বরাত পেলে, সেগুলি বাস্তবত এমটার হাতে চলে যায়। এইভাবে এখন আমাদের দেশের কয়লার মালিক যারা, তাদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে এমটা, যার কয়লার বর্তমান বাজার মূল্য ২.২ লক্ষ কোটি টাকা, অর্থাৎ আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষের হাতে ২০০০ টাকা করে দিলে যত টাকা লাগে, তত টাকা। প্রথম স্থানে আছে জিন্দল।
এই সরকারি সংস্থাগুলির কয়লা উৎপাদন খরচের সিংহভাগ যায় এমটার হাতে। কর্ণাটকের যৌথ উদ্যোগের ২০১০-১১ সালে কয়লা উৎপাদনের মোট খরচ ২৯৮.৮৭ কোটি টাকার মধ্যে ১৯৮ কোটি টাকা গেছিল অপারেটর এমটা-কে দিতে, এরকমই অভিযোগ। বিনিময়ে সবই করে এমটা। জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র আদায়, জমি অধিগ্রহণ, কয়লা উত্তোলন। খুব কম সময়ে সরকারি ছাড়পত্র আদায়ে এদের দক্ষতা প্রবাদের মতো। যথাযথ ঘুষ দেওয়া ছাড়া যে ছাড়পত্র আদায়ই করা যায় না, একথা সবাই জানে। আর এ থেকেই মাত্র বিশ বছরেরও কম সময়ে এমটা এখন একটা সাম্রাজ্য।
দুবরাজপুরে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন শাসক দলের সাংসদের সঙ্গে মহাকরণে এসে এমটার কর্ণধার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ২ কোটি টাকা দান করে যান।
(তথ্যসূত্র : ৩-৫ সেপ্টেম্বর ২০১২-র ডিএনএ পত্রিকা, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ ইকোনমিক টাইমস, ৯ নভেম্বর ২০১২ বর্তমান)
Leave a Reply