রহমান আলী, পোয়াতুরকুঠি ছিটমহল, ২৮ জুন#
২৬ জুন শুক্রবার শহিদ দিবস স্মরণে দহগ্রাম ও আঙারপোতা ছিটবাসীর চলাচলের একমাত্র পথ তিনবিঘা করিডরে ‘শহিদ সুধীর স্মৃতি ফলক’-এর কাছে অবস্থান নেয় ভারত ও বাংলাদেশের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় পাঁচ-সাত হাজার মানুষ। শহিদ স্মরণে যৌথ সমাবেশ করে তারা। ‘ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি’ গত কয়েক বছর ধরে এই দিনটি পালন করে আসছে। ১৯৯২ সালে এই দিনে আঙারপোতা ও দহগ্রাম ছিটমহলের মুক্তির আন্দোলনে বিএসএফ-এর গুলিতে তিনজন শহিদ হন ।
এদিন দূরদূরান্ত থেকে আসা দুই দেশের ১৬২টি ছিটমহলের মানুষ শহিদ বেদীতে মাল্যদান এবং শহিদদের আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সমন্বয় কমিটির বাংলাদেশ ইউনিটের গোলাম মোস্তফা ১৯৭৪ সালের স্থলসীমান্ত চুক্তি রূপায়ন করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এঁদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে’। এরপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে সমন্বয় কমিটির ভারত ইউনিটের দীপ্তিমান সেনগুপ্ত ছিটবাসীদের উদ্দেশ্য বলেন – ‘আমার বাবা দীপক সেনগুপ্তের যে স্বপ্ন ছিল, সেটি আপনাদের হাত না হলে আজ সফল হত না। দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করুন, আপনাদের আন্দোলন শ্রেষ্ঠ, আপনাদের দাবি শ্রেষ্ঠ। দেশপ্রেম দিয়ে বুঝিয়ে দিন ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের যন্ত্রণা। মানুষ হয়ে মানুষের জন্য লড়াই করুন, মানুষ হয়ে মানুষের পক্ষে কথা বলুন, মিথ্যার আশ্রয় নেবেন না। আগামী ৩১ জুলাই রাত ১২টার পর থেকে কোনো ছিটমহল থাকছে না। ১১২টি ভারত এবং ৫২টি বাংলাদেশের বদলে থাকবে একটি ভারত ও একটি বাংলাদেশ। তাই ১ আগস্টকে আমরা ছিটমহলের বিজয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করলাম’ — এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পরেন। তখন ছিটবাসীরাও কেঁদে ফেলে তার কান্না দেখে। ছিটবাসীর কাছে এই স্বাধীনতা ‘রক্তপাতহীন বিপ্লবের স্বাধীনতা’।
ইতিমধ্যে কোচবিহারের জেলাশাসক পি-উলাগানাথন ২৪ জুন ২০১৫ জারি করা এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, ৩১ জুলাই মধ্যরাত থেকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা সব বাংলাদেশি ছিটমহল ভারতের ভূখন্ড বলে চিহ্নিত হবে। ২০১১ সালে দুই দেশের যৌথ শুমারিতে যে সমস্ত ব্যক্তির নাম রয়েছে ছিটবাসী হিসেবে, তারাই এবং তাদের সন্তানেরাই শুধুমাত্র ভারতের নাগরিক হওয়ার সুযোগ পাবে। কোচবিহার জেলা প্রশাসন ৩১ জুলাই পর্যন্ত ছিটমহলগুলিতে জমি বিক্রি নিষেধ করেছে ।
২৫ জুন, বৃহস্পতিবার কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমার চ্যাংরাবান্ধায় বিএসএফের ক্যাম্পে দুই দেশের জেলা প্রশাসক পর্যায়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে — ৬ থেকে ১৬ জুলাই ছিটমহলের প্রকৃত তথ্য, অর্থনৈতিক, সামাজিক অবস্থান, জনসংখ্যাসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে খানা জরিপ করা হবে। ভারত বাংলাদেশ উভয় দেশেরই ৭৫ জন করে গণনাকারী ছিটমহলে যৌথ জরিপের কাজ করবে।
৩১ জুলাই বা ১ আগস্টকে সামনে রেখে এখন ছিটমহলগুলিতে চলছে আনন্দ-মেলার প্রস্তুতি, সেজে উঠছে নতুন রঙে। ৩১ জুলাই মধ্যরাত যখন পৃথিবী নিঝঝুম-নিস্তব্ধ বা ঘুমন্ত তখন ছিটমহলের মানুষরা জেগে উঠবে নতুন ভারতীয় রূপে। প্রতিটি বাড়িতে মোমবাতি, কুপি বা প্রদীপ, মশাল প্রভৃতি জ্বালিয়ে নব স্বাধীনতাকে গ্রহণ করবে। দীর্ঘ ৬৮ বছরের নাগরিক পরিচয়হীন জীবনকে পেছনে ফেলে প্রবেশ করবে নাগরিক পরিচয়ের পুরোনো দেশে আবার নতুন করে।
কিরীটি রায় says
সম্পূর্ণ ভাবেই বিকৃত তথ্য । প্রকৃতপক্ষে ছিটমহলের বাসিন্দাদের কাছে চিত্রটা অপরিস্কার। ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশী ছিটমহলের জমি বর্তমানে ভারত সরকারের মালিকানাধীন। আজও প্রশাসন স্থির করেননি যে, যে সকল ছিটমহলবাসীরা তাঁদের নিজের জমিতে পুরুষানুক্রমিক ভাবে বাস করতেন – তাঁরা ওই জমির মালিকানা পাবেন কি না! ঠিক তেমনি বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলবাসীরা আতংকে দিন কাটাচ্ছেন। মনে রাখবেন, প্রায় প্রতিটি ছিটমহলের জমির বেশ কিছু অংশ বেআইনি ভাবে বিদেশী মানুষের হস্তগত হয়ে আছে। সরকার, প্রশাসন সব জেনেও চুপ। জমি মাফিয়াদের আনন্দ।