কুশল বসু, কলকাতা, ১৫ আগস্ট#
” |
এত বেদনা, আঘাত আর রক্তপাত সত্ত্বেও, গাজার বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু ইজরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চায় না। গাজার যে কোনো রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে লোকের সঙ্গে কথা বলে দেখো, দেখবে দশজনের মধ্যে হয়ত একজন চাইবে যুদ্ধবিরতি। বাকিরা বলবে, সংগ্রাম চলুক। এর কারণ, লোকে জানে যুদ্ধবিরতির রাজনীতিটা, লোকে ইজরায়েলকে চেনে। তারা জানে, ইজরায়েলের পরিকল্পনাটা কী!!! হামাস এবং অন্যান্য প্যালেস্তানিয় আন্দোলনগুলি জীবনে অন্তত একবারের জন্যও মানুষের কথা শুনে দরকষাকষির টেবিল থেকে উঠে চলে আসবে কি? … টেবিলে আমাদের শর্তটা ছুঁড়ে দিয়ে ইজরায়েলকে বলে এসো, যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা হবে … |
আবু ইয়াজান, গাজা ইউথ ব্রেকস আউট-এর সদস্য, ১৬ আগস্ট |
দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে যাচ্ছে ইজরায়েলের বর্তমান গাজা আগ্রাসন। কিন্তু এরই মধ্যে গাজায় যে ধ্বংসলীলা চালিয়েছে ইজরায়েল, তা গাজাকে প্রায় মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। এরই মধ্যে ১৯০০ গাজাবাসী প্রাণ হারিয়েছে ইজরায়েলি হানায়, এর মধ্যে ৪১৫ জনই শিশু। প্রায় ১০,০০০ জন আহত। রেড ক্রস নামক অসরকারি সংগঠনটির কর্তা পিটার মরার বলেছেন, গাজায় যে ধ্বংসলীলা চলেছে তার তুল্য জিনিস তিনি জীবনে দেখেননি। প্রায় দশ হাজার বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। তিরিশ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত। ২৯ জুলাই গাজার একমাত্র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ফলে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে ময়লা পরিশোধণ, রেফ্রিজারেশন, যোগাযোগ প্রভৃতি। শয়ে শয়ে স্কুল, মসজিদ, কারখানা ও খামার ক্ষতিগ্রস্ত। ২০০৯ এবং ২০১২ সালের ইজরায়েলি হানায় গাজায় যে ধ্বংস ঘটে, তা পুনর্নির্মাণ হয়নি, ফের নয়া ধ্বংস।
গাজায় মোট হাসপাতালের বেড ছিল দুই হাজার সাতচল্লিশটি। অর্থাৎ হাসপাতাল ধ্বংস না হলেও প্রতি পাঁচজন আহত পিছু একটি করে বিছানা ছিল হাসপাতালে। প্রয়োজনের তুলনায় অতি দ্রুত ছেড়ে দিতে হচ্ছে আহতদের। তাছাড়া ওষুধ সাপ্লাই কম। অতি সম্প্রতি তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এর্দোগান ঘোষণা করেছেন, আহত গাজাবাসীদের তুরস্কে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হবে।
কায়রোতে যে দর কষাকষি চলছে হামাস, ইজরায়েল এবং মধ্যস্থতাকারী মিশরের মধ্যে, তার মূল কথাটি হল, ইজরায়েল গত সাত বছর ধরে চালিয়ে আসা গাজার ওপর অবরোধ প্রত্যাহার করবে কি না। এই অবরোধ না তুলে নিয়ে আলোচনায় বসাই অর্থহীন। ইজরায়েল সেই পুরোনো কাজটি না করে নতুন নতুন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। এবারেই তারা দাবি করেছে, সীমান্তের তিন কিলোমিটার ছেড়ে দিয়ে বসবাস করতে হবে গাজাবাসীকে। বস্তুত তিন কিলোমিটার ছেড়ে দেওয়া মানে গাজার ৪৪ শতাংশ জায়গা ছেড়ে দেওয়া (মানচিত্র দ্রষ্টব্য)।
Leave a Reply