চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে আকাশ বাতাস মুখরিত করে তুলেছিল অনেকগুলো বড়ো মিডিয়া। কংগ্রেসের পতন মানেই বিজেপির উত্থান — এই চিরকালীন দ্বিদলীয় (বা দ্বিপাক্ষিক) ব্যকরণ মেনে তারা ভোটারদের নরেন্দ্র মোদীর ভজনায় মাতিয়ে তুলেছিল। দিল্লির নির্বাচনের আগে নবগঠিত আম আদমি পার্টিকে তারা তেমন আমল দিতে চায়নি। বিশেষত ‘আনন্দবাজার-এসি নিয়েলসন’ এবং ‘আজতক’ তো নির্বাচন পরবর্তী সমীক্ষায় ঘোষণাই করে দিল, দিল্লিতে বিজেপি ক্ষমতায় আসছে। কিন্তু ভোটের ফলাফল তাদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে।
বড়ো ক্ষমতাশালী মিডিয়া যত না খবর দিতে উৎসুক, তার চেয়েও বেশি খবর তৈরি করতে উদ্যোগী তারা। তারা মনে করে, জনমতকে আমরাই গড়ে দেব। কারখানায় যেমন কাঁচামাল থেকে আধুনিক মেশিনের ছাঁচে ঢেলে নানান জিনিস উৎপাদন হয়, ঠিক তেমন বড়ো সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল মানুষের মনটাকে ছেঁচে জনমত উৎপাদন করতে চায়। মানুষের স্বাধীন ভাবনাচিন্তার প্রকাশ ঘটুক, এটা তাদের মনঃপূত নয়।
নির্বাচনেও যে গণতন্ত্র নিয়ে মিডিয়া বাগাড়ম্বর করে, আসলে সেখানেও এক ধরনের ফ্যাসিস্ট নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা হয় মানুষের মনের ওপর। আমরা পাবলিক তার শিকার হয়ে মিডিয়ার ভাষায় কথা বলি, মিডিয়ার লেজুড়বৃত্তিও করি। কিন্তু মানুষের মনের গতি বিচিত্র! কখনও কখনও সেই ফ্যাসিস্ট নিয়ন্ত্রণ থেকে সে মুক্ত হয়ে ওঠে, সাময়িকভাবে কিছুটা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ করতে উদ্যত হয়। দিল্লির নির্বাচনেও সেরকমটাই ঘটেছে। কোন রাজনৈতিক দল কত আসন জিতেছে, সেই ফলের বাইরেও একটা ফল প্রকাশ হয়েছে, মিডিয়ার রাজনীতির পরাজয় ঘটেছে এই নির্বাচনে।
বড়ো দল এবং বড়ো মিডিয়া কি এই ফলাফল থেকে শিক্ষা নেবে? নিজেদের ক্ষমতার সঙ্গে কি তারা বোঝাপড়া করতে পারবে? নাকি আবার নতুন নতুন কায়দায় জনসাধারণকে বোকা বানানোর খেলায় মত্ত হয়ে উঠবে তারা?
নির্বাচনের যেদিন ফল ঘোষণা হল, সেদিন দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদীর সাংবাদিক সম্মেলন আগে থেকেই আয়োজন করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল দেখে খোদ নরেন্দ্র মোদী একটু গুটিয়ে গেলেন। সাংবাদিক সম্মেলন তড়িঘড়ি বাতিল করা হল। পাবলিক যে এরকম ক্যাচাল করে দেবে কে জানতো!
Leave a Reply