দিল্লির আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে ফের বড়ো মিডিয়া তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠা পেতে চাওয়া পার্টি, আম আদমি পার্টি-ও মিডিয়ার কথা মাথায় রেখে তাদের কায়দা কৌশলের কিছু পরিবর্তন এনেছে। পার্টির নেতা যোগেন্দ্র যাদব বলেছেন, ‘আজকের মিডিয়াগ্রস্ত গণতন্ত্রে আমাদের একটা ‘মুখ’ দরকার। তাই দুর্নীতি বা লোকপালের আদর্শবাদী কথা না তুলে এবারের দিল্লির নির্বাচনে আমরা ‘পাঁচ সাল কেজরিওয়াল’ স্লোগানটি দিয়েছি।’ এছাড়াও প্রার্থী মনোনয়নের সময়, সৎ চরিত্রের প্রার্থীর চেয়েও, জিততে পারার সম্ভবনাময় প্রার্থীর কথা বেশি মাথায় রাখা হয়েছে — স্বীকার করে নিয়েছেন যাদব। আগের দুটি নির্বাচনে বড়ো বড়ো কথা বলে এবার ডিগবাজি খাওয়ার জন্য আম আদমি পার্টিকে কেউ গালমন্দ করতেই পারে, তবে মাথায় রাখা দরকার, এই বদলগুলি হয় ব্যবস্থাটির চাপেই, যে ব্যবস্থার অংশীদার আমি আপনি সবাই। যাদব মিডিয়াগ্রস্ত গণতন্ত্রের কথা বলেছেন। আসলে তো মিডিয়াগ্রস্ত আমি আপনি যোগেন্দ্র যাদব — সবাই।
তবে এই নির্বাচনেও আম আদমি পার্টি নয়া রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার কিছু ইঙ্গিত রেখেছে। যেমন, এক, ‘দিল্লি ডায়লগ’, যা তারা বেশ কয়েকমাস ধরে চালিয়েছে বিভিন্ন মহল্লায় সভা করে করে। এভাবে তারা ব্যাপক জন সমাজের মধ্যে থেকে ‘ইস্যু’ তুলে এনেছে। যেখানে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের ইস্যু ঠিক করে, হয় কর্পোরেট ও মিডিয়ার ম্যানিফেস্টো মেনে, অথবা নিজেদের ‘আদর্শ’-র মধ্যে থেকে — দস্তুর এটাই। সেখানে এইভাবে ভোটের ইস্যুও যদি তুলে আনা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষেরই লাভ — ভোটপর্বে জাতীয়তাবাদ, ধর্ম, সেকুলারবাদ, জাতপাত প্রভৃতির মধ্যে থেকে একটা বেছে নিতে হয় না। অথবা ‘বিজলি-পাণি-সড়ক’-এর মতো চাপিয়ে দেওয়া লব্জ ধরে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করতে হয় না।
অন্য পার্টিকে নিন্দেমন্দ করার বদলে আম আদমি পার্টি দিল্লি সংলাপ-এর মাধ্যমে উঠে আসা ইস্যুগুলো নিয়ে বিতর্ক করতে আহ্বান করেছে অন্যান্য ক্ষমতা পেতে চাওয়া পার্টিগুলোকে। সংসদীয়, প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থাটিতে ‘আদর্শ’ আর বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির বাগাড়ম্বরের মাধ্যমে ভোট ‘কেনা’ হয়। হারিয়ে যায় সাধারণ মানুষের চাহিদা। আম আদমি পার্টির এই প্রয়াসে সেই চাকা ঘুরিয়ে দেওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে।
Leave a Reply