সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ২৫ অক্টোবর#
‘ইরম-এর দাবি পূরণ হলেই তিনি নিজে হাতে আপনাদের থেকে এই পুরস্কার নিয়ে যাবেন, ততদিন এই পুরস্কার আপনাদের কাছে গচ্ছিত থাক’
— কথাগুলো বললেন ইরম শর্মিলার বড়ো ভাই ইরম সিংহজিৎ। কেরালার লেখক-শিল্পীদের নিয়ে সংগঠিত কেভলান ট্রাস্ট বিগত কয়েক বছর ধরে মানবাধিকার ও শান্তির জন্য লড়াইয়ের উল্লেখযোগ্য সাক্ষ্যবহনকারীদের পুরস্কার প্রদান করে আসছেন। ২০১২-তে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে যখন এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন প্রথমে শর্মিলার মতামত নেওয়া হয়নি বলে প্রেস ক্লাবে জানালেন কলকাতায় তাঁর প্রতিনিধি হয়ে আসা বড়ো ভাই ইরম সিংহজিৎ। তিনি এও জানালেন যে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এক প্রতিনিধিদল যখন শর্মিলার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন, তখন তাঁদের অনুমতি দেয়নি মণিপুরের স্বরাষ্ট্র দপ্তর। এমনকী তিনি কেন এই পুরস্কার নিতে পারছেন না সে কথা আদালতে সাংবাদিকদের সামনে বলার ইচ্ছা প্রকাশ করলেও ইরম সিংহজিৎ-কে সেই অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি বললেন, ‘আমরা আজ এখানে এসেছি ইরমের প্রতিনিধি হয়ে আপনাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে।’
সিংহজিৎ আরও জানান, আমরা ইরমের পরিবারের লোকজন ইদানীং ওর সাথে দেখা করতে পারি না। স্বরাষ্ট্র দপ্তরের থেকে অনুমতি নিতে হয়, যা পেতে আগে লাগত ১৫ দিন, এখন তা পেতে এক মাসও পেরিয়ে যায়। কেবলমাত্র প্রতি ১৫ দিন বাদে ওকে যখন আদালতে পেশ করা হয়, রুটিন হাইপ্রোফাইল বন্দি করে রাখার জন্য তখনই একমাত্র ওর সাথে দেখা করা সম্ভব। গত ২০০৯ সালে আমাদের মাতৃসমা মহাশ্বেতা দেবী ইরমের সাথে দেখা করার জন্য মণিপুর গিয়েছিলেন, কিন্তু আবেদন নিবেদন সত্ত্বেও কয়েকদিন অপেক্ষা করে তাকে দেখা না করেই ফিরে আসতে হয়েছিল। এই মেমেন্টো এবং অর্থ আমি ট্রাস্টের হাতেই গচ্ছিত রাখার অনুরোধ করছি যাতে শর্মিলার দাবী পূরণ হলে তিনি নিজের হাতে এই পুরস্কার তুলে নিতে পারে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরও জানান ২০০৪ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মণিপুরের আফসপা অপব্যবহার সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে একটি বিচারভাগীয় কমিশন গঠন করেছিলেন। যার রিপোর্ট কমিশন পেশ করলেও তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে জানা গেছে আফসপা আইন সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি এখনও ক্যাবিনেট সাব-কমিটির কাছে রয়েছে।
তার দীর্ঘদিনের এই লড়াইয়ের বহু পুরস্কার তিনি পেয়েছেন যার মধ্যে ২০০৭ সালে গোয়াঙজু মানবাধিকার পুরস্কার, এশিয়ান হিউম্যান রাইট্স কমিশন কর্তৃক লাইফটাইম পুরস্কার সহ বেশকয়েকটি।
তিনি আরও জানান ১৯৬০ সাল থেকে এই দমনমূলক অ্যাক্ট যে সমস্যার মোকাবিলার জন্য প্রয়োগ করা শুরু হয়েছিল তা ক্রমশঃ তার ভৌগলিক সীমাকে বাড়িয়ে চলেছে। কাশ্মীর সহ অন্যত্র এই অ্যাক্টের প্রয়োগ করা হচ্ছে। সম্প্রতি কয়েকবছর আগে যখন ছত্রিশগড়ে মাওবাদী মোকাবিলার বিশেষ আইন প্রয়োগের কথা বলা হয় এবং বায়ু সেনার কপ্টার ব্যবহারের কথা ওঠে তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাংসদদের পক্ষ থেকে তার বিরোধিতা করা হয়, এবং বলা আমাদের ভাই-বোনেদের কেউ কেউ বিপথে গেলেও তাদেরকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেওয়া ঠিক নয়। আমার প্রশ্ন হল তাহলে কি আমরা মণিপুরের মানুষরা কি আপনাদের ভাই নই?
পুরস্কার প্রদান করতে গিয়ে মহাশ্বেতা দেবী বলেন যদি রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনিও শর্মিলাকে নিয়ে গর্ব বোধ করতেন। বলে তিনি গেয়ে ওঠেন ‘এসো মুক্ত করো, মুক্তো করো এই অন্ধকারের দ্বার।’ তিনি ইরম শর্মিলার কথা, তার লড়াইয়ের কথা ছোটদের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার আবেদন জানান।তিনি আরও বলেন জোয়ান অফ আর্চ যার জন্য স্মরণীয়, তার থেকে কোন অংশেই শর্মিলা কম নন। অথচ তার লড়াইয়ের কথা আমরা সবার মধ্যে পৌছে দিতে পারছি না। ও আমাদের সবার গর্ব। শুধু মণিপুরের নয় ও মানবতার গর্ব, পৃথিবীর গর্ব। ট্রাস্টের তরফে কেরলার বিশিষ্ট চলচিত্র পরিচালক যোশী যোসেফ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন মণিপুর থেকে জাস্টিস পিস ফাউনডেশন এর পক্ষ থেকে আসা মিঃ বাবলু।
এখানে আমাদের স্মরণে রাখা দরকার যে গত ৫ই নভেম্বর ২০০০ সালে থেকে শর্মিলা আফসপা বিরোধিতা করে মুখ দিয়ে কিছু খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করছেন না। তাঁকে জোর করে বলপূর্বক নাক দিয়ে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।
Leave a Reply