মুহাম্মদ হেলালউদ্দিন, আসাম থেকে ফিরে, ২৬ সেপ্টেম্বর#
অসমে জাতিদাঙ্গা ভাষাদাঙ্গা যেন গা-সওয়া ব্যাপার। ১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচরে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলনে ১ জন মহিলা সহ ১১ জন শহিদ হয়েছিলেন। অসমের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার ঘরছাড়া বাঙলি পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিল। এবারেও পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরে কয়েক হাজার বাঙালি আশ্রয় নিয়েছে। অসমে ভাষাদাঙ্গা বা বাঙালি হটাও আন্দোলন হয়েছে, অশান্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে।
১৩ সেপ্টেম্বর আমি, রামজীবন ভৌমিক, জিতেন নন্দী, কামরুজ্জামান কোকড়াঝাড়ে গিয়েছিলাম। স্টেশনের ও শহরের সব জায়গায় পোস্টার সাঁটা আছে। পোস্টারে লেখা ছিল বাংলাদেশিদের বয়কট করো নয়তো শাস্তি দেওয়া হবে। তাদের কোনোরকম কাজ দেওয়া হলে ১০০০০ টাকার জরিমানা করা হবে। বাঙালিরা বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানেরা ভয়ে সিঁটিয়ে আছে।
২৬ সেপ্টেম্বর ফোনে কথা হয় আব্দুল মালেকের সঙ্গে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ, কর্মসূত্রে অসমের কোকড়াঝাড় শহরে সোনার কারবার করেন। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের যারা অসমে স্বর্ণশিল্পের কাজ করত বিটিসি এলাকায়, তারা কাজ হারিয়ে ফিরে আসছে বাংলায়। কেউ কেউ আবার অসমে ফিরে গেলেও দোকান পসার খুলতে পারছে না। আমি সপরিবারে বাস করি শহর থেকে তিন কিমি ভেতরে। ২১ জুলাই প্রাণটি নিয়ে কোনোরকমে পশ্চিমবঙ্গে নিজের বাড়িতে চলে আসি। কয়েকদিন থাকার পরে আবার ফিরে যাই। কিন্তু দোকান খুলতে পারছি না। আমার বাড়ি হুগলি জেলার সিঙ্গুর থানার দিয়াড়ায়। আমাদের গ্রামের নুর হোসেন কোকড়াঝাড় শহরে সিটি জুয়েলার্সে পালিশের কাজ করত। সে এখনও কোকড়াঝাড়ে ফিরতে পারেনি। একই অবস্থা হুগলি জেলার চণ্ডীতলা থানার মঙ্গলপাড়ার সেলিমের। সে সোনা পালিশের কাজ করত ভদ্র জুয়েলার্সে।
অসমে পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে কোচবিহারের বহু মানুষ বাস করত। তারা সব পালিয়ে গিয়েছে। অসমের ধুবড়ি জেলার বহু বাঙালি নানান কাজকারবার করত কোকড়াঝাড়ে। তারা অর্থাৎ বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানেরা পালিয়ে গিয়ে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। দুমাসেরও বেশি সময় ধরে তারা ত্রাণ শিবিরেই রয়েছে, ফিরতে পারছে না। বড়োদের কাছে এখন বাংলাভাষী মুসলমান মানেই বাংলাদেশি। তারা কি ফিরতে পারবে কাজের জায়গায়? কে দেবে তাদের নিরাপত্তা? আমি কোনো কাজ পাচ্ছি না। দোকান খুলতে পারছি না। সংসারের অবস্থা করুণ। এমন করে আর কতদিন চলবে? শহর থেকে দূরে গ্রামের দিকে থাকি। এখন ভয়ে আতঙ্কে সিঁটিয়ে আছি।’
Leave a Reply