সংবাদমন্থন প্রতিবেদন, ৭ আগস্ট, সূত্র ওয়ার্ল্ড সোস্যালিস্ট ওয়েবসাইট#
শ্রীলঙ্কার পশ্চিম প্রদেশের গামপাহা জেলার উইলিউইরিয়াতে গ্রামবাসী এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত তিনজন গ্রামবাসী মারা গেছে। গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করছিল, তাদের পরিষ্কার খাবার জলের কুয়ো একটি রাবার গ্লাভস তৈরির কারখানার বর্জ্যে দূষিত হয়ে গিয়েছিল। ওই দস্তানা তৈরির কারখানার নাম, ভিনোগ্রস ডিপ প্রডাক্টস। এই কারখানার মালিক শ্রীলঙ্কার অন্যতম বড়ো কর্পোরেট গ্রুপ হ্যালেস। দেশটির রাষ্ট্রপতির সঙ্গে এই কর্পোরেটের খুবই দহরম মহরম।
বেশ কয়েকদিন ধরেই গালোলুয়া, নাদুগামা, রাথুপাসুয়েলা, উরুয়েলা, কাতুরুওয়াট্টা, কিরিকিথা, এবং আমবারালুয়া গ্রামের গ্রামবাসীরা এই কারখানাটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছিল। ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার প্রায় পাঁচ হাজার গ্রামবাসী (পুরুষ, মহিলা এবং শিশু) উইলিউইরিয়া, বেলুম্মাহারা এবং রাথুপাসুয়েলা এর সংযোগ স্থলে, কলম্বো-ক্যান্ডি মহাসড়কের ওপর অবস্থান শুরু করে। সড়ক অবরুদ্ধ হয়। পুলিশ তাদের সরতে বললেও তারা সরেনি। হাতে পোস্টার ছিল, ‘আমরা অ্যাসিড-জল চাই না। শান্তি ফিরবে, যদি আমরা পরিষ্কার জল পাই’। এলটিটিই নিকেশকারী শ্রীলঙ্কান রাষ্ট্রপতি রাজাপক্ষ-র ডিফেন্স সেক্রেটারি গোটাভায়া রাজাপক্ষর-র নেতৃত্বে আদেশ আসে, জলের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর মিলিটারি নামানো হোক।
ব্যস্, টি-৫৬ রাইফেল হাতে নিয়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে এক হাজার সেনা মোতায়েন করা হয় ওই এলাকায়। তামিল বিদ্রোহী এলটিটিই-র বিরুদ্ধে কয়েকবছর আগে জিতে আসা শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনীর মোটরসাইকেল ব্রিগেড-ও চলে আসে বেলুমাহারার দিক থেকে। ঘন্টা দুয়েক পরে বিকেলের দিকে উইলিউইরিয়ার দিক থেকে আরও সেনা আসে। গ্রামবাসীরা এক ব্রিগেডিয়ারের সঙ্গে কথাবার্তার পর পাঁচ মিনিটের মধ্যে এলাকা খালি করে দিতে রাজি হলেও এরই মাঝে কমান্ডোরা গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। তার সঙ্গে শুরু হয় জলকামান, কাঁদানে গ্যাস, লাঠিচার্জ। রাতেও হামলা চলে। সন্ধ্যের দিকে এলাকার বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেয় মিলিটারি, এমনই অভিযোগ সংবাদমাধ্যম এবং গ্রামবাসীদের। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা চালাতে থাকে সেনাবাহিনী। ভীত জনতা পাশের একটি চার্চে আশ্রয় নিলে সেনাবাহিনী সেই চার্চেও ঢুকে পড়ে এবং গুলি চালাতে শুরু করে। উইলিউইরিয়া এলাকা কার্যত সেনাবাহিনীর মুক্তাঞ্চলে পরিণত হয়।
ওয়ার্ল্ড সোস্যালিস্ট ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রবন্ধে গ্রামবাসী একটি বাচ্চার বয়ান পাওয়া যায় — ‘স্কুলে আমাদের সমরনায়কদের ভালোবাসতে শেখানো হয়। আমরা তাদের ভালোবাসতাম। আমরা সেনাবাহিনীর জন্য বোধি পূজা (বৌদ্ধ প্রার্থনা)-ও করেছি। কিন্তু আজ ওরা কোনও কারণ ছাড়াই আমাদের আক্রমণ করল।’ ওই বাচ্চাটির মা জানায়, ‘ওরা যদি আমাদের এইভাবে অত্যাচার করতে পারে, তাহলে (গৃহযুদ্ধের সময়) তামিলদের কি করেছে!’
আরেকজন প্রতিবাদী জানায়, ‘মিডিয়া, পুলিশ, আর্মি এবং কোর্ট আমাদের বিরুদ্ধে। মিডিয়া আমাদের বিষয়ে সত্য কথা লেখেনি। একজন বিচারক কারখানার দূষণের অনুসন্ধান ১২ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করে দিয়েছে। কিন্ত এটা তো একটা জরুরি বিষয়! লোকে এখন রাস্তা অবরোধ করবে না!’
একজন ষাটোর্দ্ধ বৃদ্ধ জানান, ‘আর্মি আমার বুকে লাঠির বাড়ি মেরে বলছে, আমরা শ্রীলঙ্কান আর্মি। তোমাদের মতো লোক আমাদের চ্যালেঞ্জ করছ?’
এক যুবক জানান, ‘চার্চ থেকে ওরা চল্লিশ জনকে বের করে বেধরক পিটিয়েছে। আমরা নাকি একদিন রাস্তা অবরোধ করে রেখে দোষ করেছি। আর ওরা তো এখন দিনের পর দিন রাস্তা অবরোধ করে রাখছে। তার বেলা?’
ভিনোগ্রস ডিপ কারখানার এক প্রাক্তন শ্রমিক জানালেন, রাসায়নিক জল বর্জ্য হিসেবে বেরোয় কারখানা থেকে। তা শোধন করার বন্দোবস্ত নেই এখানে। তার বক্তব্য, প্রতিদিন খোলা মাঠে ১৫,০০০ গ্যালন দূষিত জল ছাড়ে কোম্পানি। সেগুলি চুঁইয়ে মাটির নিচে চলে যায়। তারপর তা কুয়োর জলে গিয়ে মেশে।
এলাকার জল এতটাই দূষিত হয়ে গেছে যে খাওয়া তো দূরের কথা, ওই জলে চান অবদি করা যায় না। গায়ে র্যাশ বেরোয়। নাদুগামার এক অধিবাসী জানান, অনেকের মৃত্যুর কারণ ওই জল।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, প্রতিবাদীরা সেনাবাহিনীর দিকে পেট্রোল বোম ছুঁড়েছিল। তবে চাপে পড়ে পরে ওই ঘটনার তদন্তের জন্য একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে, যাদের দু-সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দেওয়ার কথা।
Leave a Reply