অন্যদের বয়স বিশের কোঠায়। তারা সারাক্ষণই কিছু না কিছু করে চলেছে। মোবাইলে গান শোনা অথবা ‘যাত্রা’ শোনা, গল্প গুজব। এমনকী টয়লেটে ঢুকে মাঝে সাঝে কিছু নেশার জিনিস টেনে আসা। আপার বার্থে উঠে গিয়ে তাসের আসর বসানো …। সুভাষ জানার বয়স একটু বেশি। তার অবশ্য মনমরা ভাব। বেহালার সখেরবাজারে এক গ্রিলের দোকানে কাজ করত সে। পেত দিনে দেড়শো টাকা মজুরি। এখন সে চলেছে আহমেদাবাদ। আহমেদাবাদ থেকে আরও একঘন্টা বাসে গিয়ে এক কারখানায় কাজ। কী কাজ, তাও সে ভালো করে জানে না। শুনেছে, চড়া রোদের মধ্যে ‘কেবল’ পাততে হবে। মজুরি কিন্তু অনেক বেশি। ডেইলি হাজার পঞ্চাশ (এক হাজার পঞ্চাশ টাকা)। থাকা খাওয়া বাদে।
কথা বলতে বলতেই ফোন এল। বাড়ি থেকে, বউয়ের। দু-এক কথা বলে, তারপর ছেলেকে চাইল সুভাষ। ছেলেকে জিজ্ঞেস করল ফোনে, স্কুলে গিয়ে দুষ্টুমি করোনি তো? তারপর বউয়ের সঙ্গে আর দু-একটা কথা বলে ফোন রেখে দিল। দু-চোখের কোলটা একটু মুছে নিয়ে জানলা দিয়ে অনেকক্ষণ বাইরে তাকিয়ে থাকল। আমি ফাঁক পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কতদিন পর ছুটি পাবেন, কিছু জানেন? বলল, আট মাস। তারপর বলল, ট্রেনে ঘুম এসে যায়। বলে, একটু পরেই বসে বসে ঝিমোতে লাগল সুভাষ।
গোটা হাওড়া আহমেদাবাদ এক্সপ্রেসে দেড়শো জনের টিকিট রিজার্ভেশন কাটা হয়েছে লেবার হিসেবে ওই কাজে যোগ দিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কোম্পানিই সব ব্যবস্থা করেছে, বলেছিল সুভাষ। বেশিরভাগই পুরোনো, আগে থেকেই ওখানে কাজ করে। সে নতুন, আর দু-একজন আছে, কিন্তু তারা আছে অন্য কম্পার্টমেন্টে। তার বউ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মেয়ে। বউয়ের চেনা সূত্রেই এই দলে ভিড়ে যাওয়া। তাই সুভাষকে সবাই ডাকছিল — জামাই।
ট্রেনে সহযাত্রীর কথা ও ছবি, শমীক সরকার, ৩ অক্টোবর।
Leave a Reply