কুশল বসু, কলকাতা, ১৫ জুন, সঙ্গের ছবিতে গেজি পার্ক। তথ্য ও ছবিসূত্র উইকিপিডিয়া#
২৭ মে থেকে ফের ‘অকুপাই’ আন্দোলনের স্মৃতি ফিরিয়ে আনল তুরস্ক। রাজধানী ইস্তাম্বুলের গেজি পার্ক নামের একটি সবুজ অধ্যুষিত পার্ক ধ্বংস করে সেখানে শপিং মল এবং আবাসন বানানোর সরকারি পরিকল্পনাকে ভেস্তে দিতে ২৭ মে জনা পঞ্চাশেক পরিবেশপ্রেমী মানুষ জড়ো হয়েছিল। কিন্তু সরকার ২৮ মে জোর করে সেখানে পার্ক ধ্বংস করা শুরু করে। প্রতিবাদে শুরু হয়ে যায় গেজি পার্কের মধ্যে তাঁবু বানিয়ে পাহারা দেওয়া। ২৯ মে তুরস্কের এর্দোগানের সরকার জোর করে সেই ক্যাম্পগুলি ভেঙে দিতে যায়। শুরু হয় লক্ষ লক্ষ মানুষের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ। এই প্রতিবাদ এখনও চলছে। দফায় দফায় সরকারি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষও চলছে। কোনও বড়ো রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনে অংশ নেয়নি। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী থেকে ধর্মীয় লোকজন, ফুটবল ফ্যান থেকে অ্যানার্কিস্ট, কমিউনিস্ট থেকে সংখ্যালঘু কুর্দ জাতির মানুষ, পুরুষ-মহিলা-বাচ্চা-বুড়ো — দলমত নির্বিশেষে ফেটে পড়েছে তুরস্ক। দেশের রাজধানী ইস্তাম্বুল, বড়ো শহর আঙ্কারা তো বটেই, অন্তত ৪০টি শহরে হাজার হাজার মানুষ পথে নেমে গেছে প্রতিবাদে।
এর্দোগানের পার্টি ২০০২ সালে ক্ষমতায় এসেছিল তুরস্কে, তখন তুরস্ক অর্থনৈতিক সঙ্কটে ধুঁকছে। সেই অবস্থায় একের পর এক রিয়েল এস্টেট গড়ে তুলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তারা। তার জোরে পরে ২০০৭ এবং ২০১১ সালে বিপুল ভোটে জিতে যায় এর্দোগান। একইসঙ্গে এই সুদীর্ঘ শাসনকালে নিজেদের পেটোয়া শিল্পপতি থেকে শুরু করে পেটোয়া মিডিয়াও বানিয়ে ফেলে। তাদের জোরেই সমস্ত প্রতিবাদকে উপেক্ষা করে এসেছে সরকার। ২০১০ সালে নতুন করে পরমাণু চুল্লি তৈরির ঘোষণার পর ইস্তাম্বুল এবং আঙ্কারাতে মুহুর্মুহু প্রতিবাদ হতে থাকে।
২০১১ সালে তৃতীয়বারের জন্য ভোটে জিতে আসার পর থেকে এর্দোগান তুরস্ককে ইসলামিক রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যেতে শুরু করে। শিক্ষাব্যবস্থার ইসলামিকরণ করা হয়, সমকামীদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হতে থাকে, অ্যাবর্শন প্রায় নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়, ইউনিভার্সিটি চত্বরে ছাত্রদের মধ্যেও নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
রিয়েল এস্টেট তৈরির প্রক্রিয়ায় গত দশকে রাজধানী ইস্তাম্বুলকে প্রায় সবুজ শূণ্য করে ফেলা হয়। গেজি পার্ক ছিল ব্যতিক্রম। গেজি পার্ককে ভেঙে একটি পুরনো মিলিটারি ব্যারাক তৈরির নামে শপিং মল এবং আবাসন তৈরির প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে নাগরিকদের পক্ষ থেকে প্রথম পিটিশন করা হয়েছিল। সেই পিটিশনে সাড়া দিয়ে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটি বাতিলও করেছিল। কিন্তু মে মাসের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপে প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবন পায়। শুরু হয় গেজি পার্ক ধ্বংসের তোরজোড়। সামান্য কিছু মানুষের তা সশরীরে আটকে দেওয়ার মরিয়া প্রতিরোধ জাগিয়ে দিয়েছে গোটা তুরস্কের মানুষকে।
Leave a Reply