কুশল বসু, কলকাতা, ১৬ মে#
ইউরোপের গা-ঘেঁষা দেশ তুরস্কের মনিশা অঞ্চলের সোমা কয়লাখনিতে ১৩ মে একটি বিস্ফোরণের পর খনিতে আগুন লেগে প্রায় তিনশো জন শ্রমিক মারা গেছে। এখনও পর্যন্ত আরও একশো জন শ্রমিকের কোনো খোঁজ নেই বলে বেসরকারি সূত্রে খবর। আগুন নিভেছে ১৫ মে। প্রায় সাড়ে সাতশো খনি শ্রমিক আটকা পড়ে ছিল যখন এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটে যখন খনিতে শিফট বদল হচ্ছিল। শ্রমিকেরা প্রায় ২ কিমি গভীর খনিগর্ভে আটকা পড়ে যান, কারণ বিস্ফোরণের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে লিফটটি বিকল হয়ে যায়। খনিগর্ভে কার্বন মনো অক্সাইড দূষণে মারা যায় শ্রমিকরা।
এই ঘটনাকে দুর্ঘটনা বলতে রাজি নয় শ্রমিকরা এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলি। শ্রমিকদের দাবি, তারা অনেকদিন থেকেই বলে আসছে, তুরস্কের খনিগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালো নয়। ২০১২ সালেই খনি দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৭৮ জন খনি শ্রমিক। ২০১৩ সালে তুরস্কে ৯৫ জন খনি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল বিভিন্ন দুর্ঘটনায়। তবে তুরস্কে এখনও অবধি এটাই সবচেয়ে বড়ো খনি দুর্ঘটনা। ১৯৯২ সালে একটি খনি দুর্ঘটনায় ২৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০১৩ সালে শ্রমিকরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছিল খনি সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য। গত এপ্রিল মাসেই এই দাবিতে একটি আবেদন জমা পড়ে সরকারের কাছে। কিন্তু সরকার আমল দেয়নি।
বরং দুর্ঘটনা ঘটার পর সরকারের তরফে চরম উদাসীনতা এবং নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। সংবাদে জানা গেছে, সরকারের এক মন্ত্রী নাকি এক মৃত খনি শ্রমিকের নিকটাত্মীয়কে ধাক্কা মেরেছেন। রাষ্ট্রপ্রধান এর্দোগান স্বয়ং বলেছেন, কয়লা খনিতে দুর্ঘটনা হয়েই থাকে। কাজের জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। এটা সাধারণ ব্যাপার। তবে এই কথা বলার আগে প্রতিবাদী শ্রমিকরা এর্দোগানের গাড়িতে বার কয়েক লাথি মেরেছিল। সারা তুরস্কই এরপর প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। ইউনিয়নগুলি সাধারণ ধর্মঘট ডাকে ১৫ মে। রাজধানী আঙ্কারাতে ছাত্রদের মিছিলে কাঁদানে গ্যাস চালাতে বাধ্য হয় পুলিশ।
তবে প্রতিবাদী শ্রমিকরা এই বিপর্যয়ের জন্য দুষছেন খনি বেসরকারিকরণকে। ২০০৫ সালে সোমা কয়লাখনিটি বেসরকারিকরণ করা হয়েছিল। তারপর থেকেই উৎপাদন খরচ কমতে থাকে এই খনিটিতে, কমে দাঁড়ায় আগের সাড়ে তিন ভাগের এক ভাগে।
Leave a Reply