পুষ্টি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সবাই দেশের অপুষ্টি নিয়ে চিন্তিত। বিদেশের বিচারেও আমাদের দেশে অনেক লোক অপুষ্টিতে ভুগছে। আমার বিচারে অপুষ্টি দু’রকমের। যারা উপোস করছে — শরীরে তাদের শক্তি নেই, রোগে ভোগে, কর্মক্ষমতা কম। ক্ষমতাবান লোক দিনে ৮ ঘন্টা কাজ করতে পারে। ক্ষীণ ক্ষমতার লোক রোজ ৮ ঘন্টা কাজ করতে পারছে না, তার কাজে কামাই বাড়ছে, ছোটোখাটো রোগ লেগেই আছে।
আরেকরকম অপুষ্টি আছে, যারা অতিরিক্ত খায়, তাদের। তারা একটা আপেলে একটা কামড় দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, তারা আরও স্বাদুফলের খোঁজ করে। এরা পরিমাণে বেশি খায়। যে কোনো বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন বা কনফারেন্সে খাওয়ার বহর দেখে আশ্চর্য হতে হয়। তার ফলে মেদ বাড়ছে, দুর্বার গতিতে ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। এটাকে বলে, ণ্ণঅ্যাফ্লুয়েন্ট ম্যালনিউট্রিশন’ বা ণ্ণসচ্ছল অপুষ্টি’।
উপোসি অপুষ্টির কথা বলি। যাই খাও, পেট ভরে খাও, তাহলেই চলবে। পেট ভরে খাওয়া অনেকেরই জোটে না। এর ফলে মায়েরা ক্ষীণকায় শিশু প্রসব করে — তারা জন্মের পরেই অথবা অকালেই মারা যায়। অথবা কোনোরকমে ক্ষীণজীবী হয়ে বেঁচে থাকে — মস্তিষ্কের পরিপূর্ণ বিকাশ হয় না। তাই দেখা যায়, উনিশ বছরের ছেলে বা মেয়ে ক্লাস নাইনে বা টেনে পড়ছে। এখন অবশ্য সুবিধাও হয়েছে — ক্লাস এইট পর্যন্ত পাশ ফেল থাকবে না।
একটা জিনিস মনে রাখা দরকার, বাবা এবং মায়ের স্বাস্থ্য ভালো হলে একটা সুস্থ সবল শিশু জন্মাবে আশা করা যায়। চাল আমাদের প্রধান খাদ্যের মূল অংশ। তার জন্য ভালো বীজ চাই। তৈরি জমি চাই। মাঝে মাঝে চাপান সার চাই। তবে ফসল ভালো হবে আশা করা যায়। তেমনই, একটি সুস্থ সবল সন্তান পেতে হলে শিশুবয়স থেকেই পেট পুরে খেতে হবে। যাই হোক না কেন, পেট পুরে খেলে যা দরকার, শরীর তৈরি করে নেয়। ণ্ণহাই প্রোটিন হরলিক্স কমপ্ল্যান’ লাগবে না। আসল কথা হল : দিদিমা ছোটো বয়সে পেট পুরে খেয়েছে কিনা, মা ছোটো বয়সে পেট পুরে খেয়েছে কিনা, মেয়েও ছোটো বয়স থেকে পেট পুরে খেয়েছে কিনা — তার ওপরই নির্ভর করছে সুস্থ সবল শিশুর জন্ম। অর্থাৎ, সুস্থ সবল, কর্মক্ষম জাতি তৈরি করতে তিন প্রজন্মের পেট পুরে খাওয়া লাগবে।
পুষ্টির জন্য কী খাবে?
গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা, বসন্তের সব সবজি খেতে পারবে। কাটার আগে ধোবে। জল ঝেড়ে শুকিয়ে নিতে হবে। বঁটি মুছে নিয়ে কাটবে। কাটার পর আর ধোবে না। অল্প তেল, সামান্য জল দিয়ে শাক তৈরি হয়ে যাবে। কাঁচা শাক খাবে না। সব সবজি খোসা সমেত খাওয়া যায় না। তবে খোসা জমিয়ে চচ্চড়ি করা যায়। আর আলু খোসা শুদ্ধু খাওয়া ভালো। খোসার তলায় ভিটামিন থাকে। পুঁইশাক উপকারী কিন্তু হজম করা তুলনায় শক্ত। পাটশাক ভাজার থেকে সেদ্ধ খাওয়া, অথবা আঁটি বেঁধে ডালে ঝোলে দিয়ে খাওয়া যায়। গ্রামেগঞ্জে মাছ গুগলি গেঁড়ি শামুক সময়মতো খাওয়া যাবে। হাঁস-মুরগির ডিম খাওয়া যায়। প্রোটিনের জন্য ডাল (পাঁচমেশালি ডাল হলে খুব ভালো হয়)। কিন্তু প্রতিদিন ডাল খাওয়া যায় না।
মাশরুমে ভালো প্রোটিন আছে। শেখালে এবং একটু মদত দিলে পলিথিন ব্যাগে নিজের ঘরে নিজের খাওয়ার মতো মাশরুম তৈরি করে নেওয়া যায়।
শেষ কথা : আমরা সচেতনতার জন্য ক্যাম্প করি। আমার মনে হয়, শুদ্ধ পানীয় জল এবং ছোটো শিশু থেকে সন্তানসম্ভবা মহিলাদের জন্য পুষ্টির ক্যাম্প করা উচিত।
প্রসূতি ও সদ্যোজাত শিশুর পরিচর্যা, পরিষেবা ও পুষ্টি বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ ধাত্রীবিদ্যা-বিশারদের কিছু মতামত। এবার শেষ পর্ব
Leave a Reply