২৫ সেপ্টেম্বর চেন্নাই এয়ারপোর্ট থেকে তিন জাপানি নাগরিককে (নাকাই শিনসুকে (৪৫), উনদোস ইয়োকো (৪৯), ওয়াতারিদা ম্যাকুলা (৬১)) জেরা করে ফেরত পাঠিয়ে দেয় আমাদের দেশের কর্তৃপক্ষ। তারা ৩০ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি লেখেন ভারতীয় সহনাগরিকদের উদ্দেশ্যে। ডায়ানিউক ডট অর্গ থেকে তার সম্পাদিত বাংলা এখানে দেওয়া হল।#
আমরা যখন প্লেন থেকে নামলাম এবং ইমিগ্রেশন কাউন্টারের দিকে এগোলাম, একজন আমাদের দিকে হেসে এগিয়ে এল। আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় আমরা ভিসার কাগজ পেতে পারি। সে আমাদের পাসপোর্ট দেখে ইমিগ্রেশন অফিসে নিয়ে এল। সেখানে পাঁচজন আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করল। আমাকে অন্য একটা ঘরে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করতে লাগল তিনজন, প্রথমেই প্রশ্ন, আমি জাপানের ণ্ণনো নিউক এশিয়া ফোরাম’-এর সদস্য কি না। আমি অবাক হলাম, তারা সংগঠনের নাম ঠিকঠাক বলে দেওয়ায়। ণ্ণতুমি কুদানকুলাম নিয়ে একটা আন্তর্জাতিক স্বাক্ষর অভিযানে সই করেছ, না?’ — জিজ্ঞেস করল তারা। ঠিক তাই, আমরা এবছর মে মাসে আমরা তিনজনেই একটি পিটিশনে সই করেছি। আরেকজন জিজ্ঞেস করল, আমরা কুদানকুলাম গিয়ে কী করব? আমরা আবার অবাক হলাম, এরা কি করে জানলো আমরা কুদানকুলাম যাব? কিন্তু লোকটা আমাকে একটা আভ্যন্তরীন বিমান সংস্থার টিকিট দেখালো, যা আমিই এখনও চোখে দেখিনি। ণ্ণআমরা এর মধ্যেই জেনে গেছি, তোমরা কুদানকুলাম-এর টিকিট কেটেছ। তোমরা সেখানে যাচ্ছ? কে তোমাদের ডেকেছে? কে সেখানে তোমাদের জন্য অপেক্ষা করবে? কে তুতিকোরিন এয়ারপোর্টে দাঁড়িয়ে থাকবে? তাদের নাম আর টেলিফোন নাম্বার দাও।’ তারা এরকম অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল, এবং অবাক করার মতো ব্যাপার, তারা আমাদের সব ভারতীয় বন্ধুর নাম জানে! আমরা ভয় পেলাম এবং যদি তাদের কোনও বিপদ ঘটে, তাই আমরা তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বন্ধ করলাম। তারা আরও নেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগল — ণ্ণওয়াতারিদার মশাই-এর পেশা কি? উনি তো কামিনোসেকি পরমাণু-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, তাই না?’… ওরা আমাদের কাজকর্ম নিয়ে ভালোই গবেষণা করেছে।
প্রথম প্রথম ওরা বন্ধুত্বপূর্ণভাবেই জিজ্ঞাসা করছিল। ওরা বলেছিল, আমরা ভারতে ঢুকতে পারি, যদি আমরা কুদানকুলাম আন্দোলন সম্পর্কে কোনও তথ্য তাদের দিই। কিন্তু আস্তে আস্তে ওরা বিরক্ত হচ্ছিল, তারা চাইছিল যত দ্রুত সম্ভব আমাদের বিদায় করে দিতে। যে প্লেনে আমরা কুয়ালালামপুর থেকে এখানে এসেছি, সেটা আবার ফেরত যাবে। আমরা একঘন্টার বেশি অফিসে। শেষে ওরা বলল, ণ্ণআর পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি, উত্তর দিন, অথবা আপনাদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’ আমরা দু-একটা কথা বললাম, কিন্তু তাতে তারা সন্তুষ্ট হলো না, আমাদের নিয়ে চলল ককপিটের দিকে। আমাদের মধ্যে একজন নাকাই, বাথরুমে যেতে চাইল। ওরা যেতে দিল না। আমার মনে হয় ওরা চাইছিল না, আমরা কোনওভাবে আমাদের ভারতীয় বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। আমরাও করিনি, তাতে ওদের বিপদ বাড়ত।
শেষ দরজার সামনে ওয়াতারিদা একজনকে ডেকে জানতে চাইলেন, কেন তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সে বলল, ভারত সরকার এমনই নির্দেশ দিয়েছে, নইলে তাদের জেলে পাঠানো হবে।
আমরা ভারতে এসেছিলাম, শান্তির জন্য। পরমাণুর বিপদ সম্পর্কে আমাদের শিক্ষা ভাগ করে নেবার জন্য। জাপানি হিসেবে আমরা জানি, সামরিক এবং শান্তিপূর্ণ — উভয়দিকেই পরমাণু শক্তি ব্যবহারের কী সমস্যা। …আমরা এও জানি, তোমাদের দেশ পরমাণু বেনিয়াদের সঙ্গে মিটিং করে, সেখানে পরমাণু বেচতে যারা চায়, তারা রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা নিয়ে আসে। … তোমাদের সরকার আমাদের ঢুকতে দিল না, কারণ আমরা পরমাণু সম্পর্কে যে মত পোষণ করি, তা তোমাদের সরকারের চেয়ে আলাদা। যা তোমাদের দেশের গণতান্ত্রিক আদর্শ এবং মুক্ত ভাষের দাবিগুলির সঙ্গে বেমানান। …
Leave a Reply