. … তার ব্যাঙ্কে কোনো অ্যাকাউন্টও ছিল না’. আব্বার সম্বন্ধে এমন সব কথা বলছিলেন ফয়জুর রহমান। অসহ্য গরমে ঘরের মধ্যে টিকতে না পেরে বৈশাখীর সন্ধ্যেয় ছাদে বসে আমরা গল্প করছিলাম। সামনে বড়ো পুকুর ধারে নিমগাছ। দক্ষিণে বাঁশবাগানের মাথায় চাঁদ উঠি উঠি করছে। চারধারে ‘গুবাক তরুর সারি’. বাতাসে কামিনী ফুলের ঘ্রাণ।
তিনি বললেন, ণ্ণআব্বা তো কৃষিকাজের সাথে জড়িত ছিলেন। আমরা পুরুষানুক্রমে এখানে এই বাড়িতে চারশ বছর বাস করছি। বিড়া এলাকাতে। তো দেখুন, আমরা ছয় ভাই। তাদের মধ্যে আমরা তিনজন টাকা ব্যাঙ্কে রেখে সুদ খাওয়ার কথা ভাবি না। বাকি দুই ভাইয়ের অবশ্য অন্য রকম বিচার। সুদ হল হারাম, বুঝলেন তো। আমি তো সারদায় টাকা রাখার কথা ভাবতেও পারি না। তবু ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে যে সুদ হয়, তা আমি দান করে দেই। তাকেও বলি, এই দানের জন্য কোনও পূণ্যের আশাও করি না। এতিমখানার মতো যেসব জায়গায় গরিব বাচ্চারা থেকে পড়াশুনা করে, সেখানেও দান করা যায়। আমার অবশ্য তেমন টাকাপয়সা নেই। আমি একটা সংস্থায় সিকিউরিট গার্ডের কাজ করতাম। গত কয় মাস হল সেই কাজটা করছি না। চাষবাসও আছে কিছুটা। আমি, তা ধরুন গিয়ে বছর তিরিশ হল এমন একটা বোধ নিয়ে চলছি। আমার বয়স পঞ্চাশের কাছে হল। বাকি জীবনটাও এমন করে চলে যাবে, কি বলুন। মাস তিনেক হল, বড়ো মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। সে এমএ পাশ করে চাকরি-বাকরির চেষ্টা করছিল। মেয়ের বিয়েতে পণ বা যৌতুক দেইনি। যৌতুক চাইলে সেখানে আমার মেয়ে বিয়েও করত না। সে ভালোবেসে বিয়ে করেছে।
আমি তো কোর্ট ম্যারেজ করেছি। কলেজ লাইফের প্রেম, স্ত্রী ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ে, স্মৃতিকণা ভৌমিক। তার বাবার বাড়ির সাথে সম্পর্ক নেই সেই থেকেই। আমার ছোটো মেয়ে জুঁই বোটানি অনার্স নিয়ে বিএসসি পড়ছে। সে তো ছেলেবেলা থেকেই প্যান্ট শার্ট পড়ে। ধর্মে তো কোথাও বাধা নেই। অনেকে ধর্মটা বিকৃত করে ব্যাখ্যা করে। আমি ধর্মপ্রাণ। লোভ দমন করতে হবে বুঝলেন। টাকার লোভে আমি কখনও চিটফান্ডে টাকা রাখব না। দেখুন পৃথিবী নিয়ে আমার বড়ো ভাবনা হয়। অপচয় সইতে পারি না। জীবনে এতটুকু অপচয় করি না। নাইট ডিউটি করে ফেরার পথে রাস্তায় আলো জ্বলে থাকতে দেখে সেগুলো বন্ধ করতে লেগে যেতাম। রাস্তার কল বন্ধ করতে করতে রাস্তায় চলি। লোকে পাগল ভাবে। বলুন পৃথিবীটা বড়ো বিপন্ন। আমাদের ভাবা দরকার।
শুনলেন বঙ্কিম, বিড়া, উত্তর চব্বিশ পরগনা, ২৯ এপ্রিল
Leave a Reply