মুহাম্মদ হেলালউদ্দিন, কলকাতা ১৪ মার্চ, ২০১৫#
১০ মার্চ মঙ্গলবার হুগলী আর বর্ধমানে আত্মঘাতী হলো দুই আলু চাষি। বুধবার কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, চাষিদের থেকে সাড়ে পাঁচ টাকা কেজি দরে পঞ্চাশ হাজার টন আলু কেনা হবে। সহায়ক মূল্য ঘোষণাও ছিল আশ্বাসে। কিন্তু এই আশ্বাস বাস্তবায়ন হচ্ছে কি? এমন প্রশ্ন চাষিদের। ধান কেনা নিয়েও সরকার নানা আশ্বাস দেয়। কিন্তু তার সুফল পায় না প্রান্তিক চাষি।
এবার সারা দেশেই আলুর ফলন বেশি। গতবার ওড়িশা অসম ঝাড়খণ্ড, বিহারে আলুর ফলন ভালো হয়নি। কিন্তু এবারে ওই রাজ্যগুলিতে আলুর ফলন ভালো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে গত বছর আলুর ফলন ছিল ৮৫ লক্ষ টন। এবারে সেখানে আলুর ফলন ১ কোটি ২০ লক্ষ টন। অথচ এই রাজ্যে সব হিমঘর মিলিয়ে ৭৪ লক্ষ টন আলু সংরক্ষণ করা যায়। যার ফলে আলুর দাম কমতে থাকে। তারকেশ্বর আরামবাগ এলাকায় বস্তা (৫০ কেজি) প্রতি আলুর দাম ১৭০ — ১৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কিলো সাড়ে তিন টাকা। এই লেখা যখন লিখছি, তখন কলকাতার জানবাজার থেকে আলু কিনছি ৮ টাকা কেজি দরে। এই কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে কেন এই তফাত? এই সাড়ে চার টাকা কে খাচ্ছে?
বুধবার ১১ মার্চ কৃষিমন্ত্রী শ্রী পূর্ণেন্দু বসু ঘোষণা করেন নবান্ন থেকে — শুধু কলকাতার বাজারে সরকারি বিপণন কেন্দ্রগুলির জন্য আলাদা করে পাঁচ টাকা কেজি দরে আলু কেনা হবে। তা বিক্রি করা হবে কেজিতে দু-টাকা লাভে। তবে কবে থেকে বলা হয়নি। তা-ও কলকাতার মানুষ পাবে। আর মফস্বলের মানুষ? এই খাতে প্রতিদিন ১০-১৫ টন আলু কৃষক সমবায় বা সরাসরি মাঠ থেকে কেনা হবে। সে কত দিন?
বাবলু পাল, জয়দেব পাল — নিউ মার্কেট থানার পেছনে মুদির দোকান। বাড়ি হুগলির জঙ্গীপাড়ায়। কলকাতার পঞ্চাশ কিলোমিটার দূরে। সে আলু বিক্রি করছে তার মুদির দোকানে ৮ টাকা কেজি দরে। বাবলু পাল বলেন,
‘এখানে আলু কিনছি ২৫০ টাকা বস্তা। ক্যারিং কস্ট, ওয়েস্টেজ নিয়ে আমাদের কেনা পড়ে যাচ্ছে ৬ টাকা কেজি। অথচ আমি দেশের বাড়িতে আলু বেচতে পারছি না ১৩০ টাকা বস্তাতেও। এক বিঘায় আলু চাষ করতে খরচ হচ্ছে ১৫ হাজার টাকা। ১০০ বস্তা আলু হয়েছে। ১৩০ টাকা বস্তা দরে বিক্রি করলে ১৩ হাজার টাকা পাবো। কীভাবে চলবে বলুন? যে আড়ত থেকে কিনে এই মুদি দোকানে আলু বেচছি, সে আড়তের ব্যবসায়ী বলছে, আমাকে আলু এনে দাও তোমার দেশের বাড়ি থেকে ২৩০ টাকা বস্তা দরে। আমি কীভাবে আনি বলুন তো? আমি তো এই লাইনটা বুঝি না।’
Leave a Reply