পার্থ কয়াল, ঘোড়ামারা, ১৯ আগস্ট#
কোলকাতা থেকে নামখানার ট্রেন ধরে কাকদ্বীপ হয়ে লট নং ৮ হয়ে ঘোড়ামারা যাওয়ার ট্রলার ধরলে সর্বসাকুল্যে ঘন্টা পাঁচেক সময় লাগে। ২০০৯-এর আগষ্টে ওখানে গিয়ে যে জায়গায় ট্রলার থেকে নেমেছিলাম এখন সেটা নদী ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে। সেখানে একটি চা-দোকান, যা প্রতি বছর নদী ভাঙনের সাথে সাথে ঠাঁই বদলায়। দোকানীর জায়গা জমিও চলে গেছে নদী গর্ভে। প্রতিবার নদী একটু একটু করে ভাঙে আর তার সাথে তাল মেলানোর চেষ্টা করে দিশাহারা মানুষ। একসময় এই দ্বীপের আয়তন ছিল ৩৪০০০ একর। এখন ধরলে সর্বসাকুল্যে ১৫০০ বিঘাও হবে না,বললেন এখানেরই একবাসিন্দা। একটু অবাক হয়েই যাই প্রতিবার যখন দেখি ভাঙনের ভয় নিয়ে এরা ঘর সংসার চালায় কী করে। রহস্যটা কী? যার চা-দোকান তার সন্তান খেলছিল সামনে। ওনার স্বামী মাঠে, পান বরজে কাজ করেন। আপনার চলে কী করে? জমি আগাম নিয়ে আমন চাষ করেননি? মলিন মুখে বললেন — না, আমাদের বি পি এল কার্ডের চালগম পেয়ে আর কিছু কিনে চলে। কতটা চাল-গম পান? সাড়ে তিন কেজি সপ্তাহে। আপনারা তিনজনে কটা কার্ড? দুটো। তার মানে সাত কেজি মাল পান। না, এক কেজি চাল আর এক প্যাকেট আটা কার্ড পিছু। অনেকে এই চাল খায় না, আমরা খাই। সবাই তো ওপারে (এখানে কাকদ্বীপ) জায়গা-জমি কিনে চলে যাচ্ছে, আপনারা যাবেন না? না জায়গা-জমির প্রচুর দাম (গঙ্গাসাগরের বাস স্ট্যান্ডের কাছে জীবনতলা কলোনী গড়ে ওঠা এই ঘোড়ামারা আর পূর্বতন লোহাচরা দ্বীপ,যা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে,সেই সব মানুষদের পুনর্বাসন দিয়েছে)।
ট্রলারে করে যখন লট নং ৮ থেকে ঘোড়ামারায় আসছি তখন আলাপ হল দিব্যেন্দু প্রামাণিকের সাথে। কাছেই ঘর,মন্দিরতলার কাছে। সদ্য গোঁফের রেখা বেরিয়েছে। তিনবছর আগে ক্লাস সিক্সে পড়া শেষ করে কাজের সন্ধানে প্রথমে চেন্নাই যায় ওর কিছু বন্ধুদের সাথে। সেখানে শেল্টারিং-এর কাজে জোগাড়ে হিসেবে কাজ শুরু করে। কন্ট্রাক্টরের সাথে কথা হয় কাজ শিখে গেলে রোজ ১৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২০০ টাকা হবে। কিন্তু তিনমাস পর দেখা গেল, দিচ্ছি দেব করেও আর ওই টাকা দিচ্ছে না। তখন ওরা কাজ ছেড়ে দেয়। এর পর থেকে গুজরাটে জাহাজ মেন্টেন্যান্সের কারখানায় যোগ দেয়। ওখানে এদিকের আরো ছেলে আছে। নামখানা,কাকদ্বীপের ছেলেরাও কাজ করে। ৩০০ টাকা রোজ। এই আশ্বিন মাসের ৩ তারিখে যাবে। চলবে
Leave a Reply