আমি আপনার পত্রিকার জন্ম থেকেই একজন পাঠক। আমি নিজে তো পড়ি, আরও কয়েকজনকে পড়াই। গত পয়লা মার্চ ২০১৫ সংখ্যাটিতে কুশল বসুর লেখা ”পশুর মতো বেঁচে থাকা’র বাংলাদেশে এবার খুন প্রবাসী ব্লগার’-তে শিরোনামের সাথে ভেতরের বিষয়বস্তুর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া গেল না। উনি প্রবাসী ব্লগার অভিজিত রায়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ড বলতে গিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিপন্ন, ওখানকার মানুষ পশুর মতো বেঁচে থাকেন, বাংলাদেশের অতীত ইতিহাস ইত্যাদির অবতারণা করেছেন। লেখাটির একেবারে শেষে গিয়ে উনি অভিজিতের নাম উল্লেখ করেছেন মাত্র। ভেবেছিলাম বিষয়টা নিয়ে বেশ কিছু তথ্য পাবো। কারণ ঘটনাটা একেবারে টাটকা আমাদের কাছে। কুশল বসুর অবস্থা যেন ‘ধেনো হাটে ওলের দাম কত’-এর মতো।
দুজন পাঠক ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। একজনের মত, কুশল বসু কি জামাত-ই-ইসলামি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য? অন্যজন বলেছেন, উনি কি সদ্য ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন? এক পাঠক লেখাটি পড়ে বলেছেন, এ পত্রিকা জামাতেরা লেখে, এ পত্রিকা আমায় দেবে না।
কুশল বসু মাঝখানে জামাত-ই-ইসলাম নিয়ে দু-একটি কথা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু জামাত সম্পর্কে কিছু গোলানো তথ্য দিয়েছেন। ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিপন্ন’ আক্ষরিক অর্থে কথাটা ঠিক হলেও ২০১৪ সালের পাঁচই জানুয়ারি সেই অর্থে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোট হলে এবং বিএনপি সহ কুড়ি দলের জোট ক্ষমতায় এলে, অর্থাৎ জামাত-ই-ইসলামি ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের কী অবস্থা হতে পারত তা নিশ্চয় কুশলবাবু বিলক্ষণ জানেন। ওখানকার এক কোটি অমুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের দায়িত্ব কে নিত? তাদের অবস্থা কী হত? তিনি একবারও কি ভেবে দেখেছেন? কখনো কখনো অনেক বড়ো স্বার্থে, মানুষের জীবন বাঁচাতে কোনো নিয়ম (গণতন্ত্রের মতো) বাতিল করতে হয়। গণতন্ত্র শুধুমাত্র কতগুলো গণ-এর সমষ্টি নয়। তার প্রয়োগে মানুষের মরা বাঁচার সঙ্গে সম্পর্ক করে তার প্রয়োগ করা দরকার। আমরা জানি, হাসিনা সরকারের চরম দুর্নীতির কথা। কিন্তু এটাও তো জানি, খালেদা জিয়া সরকার শুধু চরম দুর্নীতিতেই নিমজ্জিত নয়, সে ধর্মীয় মেরুকরণও করতে চায়। জামাত-ই-ইসলামির কাছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আসে শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর জন্য। গ্রামের সাধারণ মুসলিমদের শুধুমাত্র টাকা দিয়ে শাহবাগ আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর জন্য জড়ো করা হয়েছিল, পুলিশের হাতে ধরা পড়া ইসলাম বাঁচাও জনগণের বেশিরভাগ-ই জানে না শাহবাগ আন্দোলন কী ও কেন। উনি বলেছেন, ‘এক স্বঘোষিত নাস্তিক ব্লগারকে হত্যার মাধ্যমে’ — বুঝতে পারলাম না, স্বঘোষিত নাস্তিক বলতে উনি ঠিক কী বুঝিয়েছেন। কেউ যদি স্বঘোষিত মুসলিম বা হিন্দু হয়, তবে স্বঘোষিত নাস্তিক হলে ক্ষতি কী? বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী ইসলামি সন্ত্রাসবাদী, জঙ্গী সংগঠনগুলো (শুধুমাত্র সুন্নী মুসলিম বাদে) অন্য সম্প্রদায়ের ওপর যে অত্যাচার নিপীড়ন খুন করে চলেছে তার সমাধানের উপায় আমি জানতে চাইছি কুশলবাবুর কাছে। অন্য সবকিছু গণতান্ত্রিক উপায়ে চললেই বোধহয় এর সমাধান হয়ে যাবে। সারা পৃথিবী থেকে তাহলে ইসলামি জঙ্গীরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে? — বিষয়টা এত সহজ নয়। ইসলামি জিহাদ বা ইসলামি সন্ত্রাস জানতে হলে ইসলামকে ভালো করে জানতে হবে, পড়তে হবে। সবশেষে বলতে চাই, অভিজিত রায় সম্পর্কে আরও তথ্য, তার উদ্দেশ্য, মৃত্যুর কারণ জানতে চেয়েছিলাম। এমনকী অভিজিতের স্ত্রীর নামটি পর্যন্ত উল্লেখ করেননি। অভিজিতের বাবা সহ তার পরিবারের কোনো কথাও জানতে পারিনি।
তোজাম্মেল হক, অশোকনগর
এই লেখাটি পড়ে মনে হয়েছে, কুশলবাবু হয় না বুঝে লিখেছেন, অথবা কোনো অর্থের বিনিময়ে এই লেখা ছেপেছেন। তবে এক কথায় লেখাটি বিকৃত। আমি নাম প্রকাশ করতে চাই না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
কিছুদিন আগে একজন বাংলাদেশের মানুষের সাথে কথা হচ্ছিল। তিনি ওখানকার বাগেরহাট অঞ্চলে বসবাস করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত আছে তাঁর। উনি বলছিলেন, বিষয়গুলো ঢাকাকেন্দ্রীক। দাদা আমাদের এসমস্ত সমস্যা নেই। এরপর উনি আরেকটি কথা বললেন, গ্রামের মানুষজন অভিজিত রায়, একজন হিন্দুর মৃত্যু হিসেবে বিষয়টাকে ভেবেছে। সার্বিকভাবে খুব ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি, এমন নয়।
অমলেন্দু সরকার, পূর্ব যাদবপুর
Leave a Reply