কুশল বসু, কলকাতা, ১৩ ফেব্রুয়ারি, তথ্যসূত্র উইকিপিডিয়া, ছবি ইন্টারনেট থেকে#
ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহবাগে মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে শুরু হয়েছে শাহবাগ আন্দোলন। অবস্থানরত আন্দোলনকারীরা দাবি জানিয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে দেশের মানুষের গণহত্যা সংগঠিত করেছিল, তাদের ফাঁসি হোক।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। ২৫ মার্চ রাতে ও ২৬ মার্চ ভোর রাত জুড়ে পাকিস্তানী বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালায়। ২৬ মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিবেশী ভারতীয় সেনাবাহিনীর সক্রিয় হস্তক্ষেপে যুদ্ধে জয়লাভ করে। মারা যায় প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ। তবে বাংলাদেশেরই কিছু মানুষ স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল এবং পাকিস্তানী বাহিনীকে বিভিন্ন যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে সক্রিয়ভাবে সহায়তা প্রদান করেছিল, যার মধ্যে ছিল গণহত্যা, ধর্ষণ, শারীরিক নির্যাতন ইত্যাদি। যুদ্ধকালীন সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে একটি আইন তৈরি করা হয় যা ২০০৯ সালে কিছুটা সংশোধন করা হয়। এ আইনের আওতায় ২০১০ সালের ২৫ মার্চে সকল অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়। ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদ (বাচ্চু রাজাকার)-কে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।
৫ ফেব্রুয়ারি আরেক অপরাধী এবং বাংলাদেশের জামাত-ই-ইসলামি দলের নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণা হয়। কবি মেহেরুন্নেসাকে হত্যা, আলুব্দি গ্রামে ৩৪৪ জন মানুষ হত্যা সহ মোট ৬টি অপরাধের ৫টি প্রমাণিত হওয়ায় আদালত তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করে। কিন্তু এতগুলো হত্যা, ধর্ষণ, সর্বোপরি গণহত্যা ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডকে মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের ছাত্র-যুবরা মেনে নিতে পারেনি। রায়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিপুল সংখ্যক মানুষ ঢাকার শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করে এবং এর অনুসরণে একসময় দেশটির অনেক স্থানেই সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। দেশের অন্য যেসব স্থানে উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভ ও সমাবেশ হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, চট্টগ্রামের প্রেস ক্লাব চত্বর, রাজশাহীর আলুপট্টি মোড়, খুলনার শিববাড়ি মোড়, বরিশালের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার, বগুড়ার সাতমাথা, যশোরের চিত্রা মোড়, কুমিল্লার কান্দিরপাড়া, কুষ্টিয়ার থানা মোড় ইত্যাদি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং সর্বোপরি বড়ো মিডিয়ার সমর্থন পায় এই আন্দোলন।
Leave a Reply