নিজামউদ্দিন আহমেদ, মেটিয়াব্রুজ
১ মার্চ ২০১২ ডাঃ দ্বারকানাথ কোটনিস স্মৃতিরক্ষা কমিটির উদ্যোগে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির জীবনানন্দ সভাঘরে কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডাঃ বিজয় কুমার বসুর জন্মশতবর্ষ পালন করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে জাপানি আক্রমণে পর্যদুস্ত চীনের মানুষকে সাহায্য করার জন্য জওহরলাল নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস পাঁচজন চিকিৎসক এবং তাঁদের সঙ্গে প্রচুর ওষুধ দিয়ে চীনে পাঠায়। সেই মেডিকাল মিশনের অন্যতম সদস্য ছিলেন ডাঃ বিজয় কুমার বসু। সঙ্গে ছিলেন ডাঃ দ্বারকানাথ কোটনিস, যাঁর নামে এই সংগঠন। সাম্যবাদী চিন্তা, সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতা এবং মানবতাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী ডাঃ বিজয় কুমার বসু চীন থেকে ফিরে এসে বাংলার দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এছাড়াও অনেক জনকল্যাণমূলক কাজে তিনি নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। সহযোদ্ধা ডাঃ কোটনিসের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতে গড়ে তুলেছিলেন কোটনিস স্মৃতিরক্ষা কমিটি। ১৯৫৬ সালে চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন লাই ভারত সফরে এসে মেডিকাল মিশনের প্রতিনিধিদের চীনে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ১৯৫৭ সালে ডাঃ বসু চীনে যান। সেই সফর চলাকালীন তাঁর সাইনুসাইটিস অসুখ বেড়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে আকুপাংচার চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। ডাঃ বসু তখন আকুপাংচার চিকিৎসার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তা শিখতে শুরু করেন। ১৯৫৯ সালে কলকাতায় ফিরে এসে তিনি এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা শুরু করেন। আকুপাংচারের মতো কার্যত বিনা খরচের চিকিৎসার মাধ্যমে যাতে আমাদের মতো গরিব দেশের মানুষকে চিকিৎসা করা যায়, সেজন্য তিনি এখানকার চিকিৎসক এবং পরে সাধারণ মানুষকেও এই চিকিৎসা পদ্ধতির শিক্ষা দেন। তাঁরই চেষ্টায় এই রাজ্যে বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালেও শুরু হয়েছে এই চিকিৎসা। ১৯৮৬ সালে ডাঃ বসুর মৃত্যু হয়। তাঁর ইচ্ছাকে মর্যাদা দিয়ে সেই সময় তাঁর স্ত্রী ইন্দিরা বসু তিন লক্ষ টাকা এবং বসতবাড়ি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দান করেন। সেটি এখন আকুপাংচার ইন্সটিট্যুট-এর প্রধান কার্যালয়।
এদিন সংগঠনের মুখপত্র ‘অঙ্কুরে শুরু’-র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেন শ্রী অশোক মিত্র। এই সংখ্যাটি ডাঃ বিজয় কুমার বসুকে নিয়ে করা হয়েছে। বহু বক্তা এই সভায় তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য পেশ করেন।
Leave a Reply