সঞ্জয় ঘোষ, জয়নগর মজিলপুর, ১৬ অক্টোবর#
জয়নগর মজিলপুর জেএম ট্রেনিং স্কুলের মাঠের পাশে আমার ছোটো ভাইয়ের মতো বন্ধু বটে জয়ন্ত হালদারের ছবি বাঁধানোর দোকানে বসেছিলাম বাজার সেরে। সকাল তখন প্রায় ১১টা। পাশে পবনের চা, পেটা পরোটার দোকানে চায়ের অর্ডার দিয়ে হাতের জিনিসগুলো মাটিতে রেখে উঁকি দিলেন জয়ন্তর দোকানে, ময়লা লুঙ্গি আর শার্ট পরা এক জন মানুষ যার গলা থেকে ঝুলছে ময়ুরের পেখম থেকে তৈরি সুদৃশ্য একজোড়া কিছু। জয়ন্তই বলল, এগুলো ময়ুরের পেখম থেকে তৈরি? ওই মানুষটি বললেন, হ্যাঁ, এগুলো ঠাকুরের আরতি করার সময় হাওয়া করার পাখা। দাম ৭০-৮০ টাকা। শুনে আমি একটু নড়ে চড়ে বসলাম।
ওই মানুষটির থেকে জানা গেলো, ওনার বাড়ি মগরাহাট থানার ডিহি কলস গ্রামের শুড়িপুকুর গাজি পাড়ায়। নাম মহম্মদ আব্বাসউদ্দিন গাজি (৪৮-৫০)। নাইলন, প্লাস্টিক ও পাটের তৈরি ঝুলঝাড়ু, খেজুর পাতা, নাইলন, প্লাস্টিকের তৈরি ফুলঝাড়ু, মোরগের পালকের আর ময়ুরের পেখমের তৈরি ঝাড়ন এইসব নানা জিনিসের পসরা নিয়ে আব্বাসউদ্দিন যান সাগর, নামখানা, বকখালি, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ — বাড়ি বাড়ি ঘুরে ফেরি করতে। আজ এসেছেন জয়নগর মজিলপুরে। জানা গেলো, পাঁচ বছর হলো, নাইলনের আর পাঁচ-ছয় বছর হলো প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েছে। পাটের ঝুলঝাড়ু পাঁচ বছর আগের তুলনায় চারভাগের তিনভাগ কমে গেছে। তবে প্যারিস করা বাড়িতে কিন্তু পাটের ঝুলঝাড়ু ব্যবহার হয়। না হলে ঘরের রং নষ্ট হয়ে যাবে। পাটের ঝুলঝাড়ু ৩৫ টাকা দাম। নাইলনের ৪৫, ৬৫ আর ১০০ টাকা। নাইলনের গুলো টেঁকে বেশিদিন।
স্ত্রী তিন ছেলে আর দুই মেয়ে নিয়ে ৭ জনের সংসার তাঁর। এইসব তৈরি করতে স্ত্রী নাসিমা বিবি (৩৫-৪০) বাড়িতে আব্বাসউদ্দিনকে সাহায্য করেন। বড়ো ছেলে সাবির আলি গাজি (১৯-২০) বিএ ইংলিশ অনার্স নিয়ে মগরাহাট কলেজে ছয় মাস পড়ার পর টাকার অভাবে পড়া ছেড়ে দিয়ে দর্জির কাজ শিখছে। শামিম (১৭) এগারো ক্লাসে পড়ছে। বড়ো মেয়ে আট ক্লাস আর ছোটো মেয়ে চার ক্লাসে পড়ছে। মাসে গড়ে আব্বাসউদ্দিনের ওইসব বিক্রি করে ৪-৫ হাজার টাকা আয় হয়। আর কি করেন আব্বাসউদ্দিন? উত্তরে বললেন, আষাঢ় শ্রাবণ ও ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত ধান রোয়ার কাজ করেন আবার মাঘ ফাল্গুনে ধান তোলার কাজ-ও করেন। মজুরি পান ২০০-২২০ টাকা দিনে।
Leave a Reply