লকডাউনে কাজ হারানো মানুষের স্কেচ আঁকছেন সুমিত
সুমিত দাস। শান্তিপুর। ৩০ জুলাই, ২০২০।#
বাদলদা আজকের মেনু কী? হাসিমুখে জানতে চায় বুড়োদা।
-‘গতকাল ডিম হয়েছে। আজ সোয়াবিনের তরকারি আর ভাত।’
লকডাউনের সময়ে কাশ্যপপাড়া বারোয়ারির ক্লাবের পেছনে খোলা হয়েছিল কমিউনিটি কিচেন। ২৪ শে মার্চ থেকে ৫ ই জুন চলে এই হেঁশেল। প্রতিদিন মোটামুটি ৫০ টি পরিবার এখান থেকে খাবার সংগ্রহ করত। বাদলদা ছিলেন এই যৌথ রান্নাঘরের রাঁধুনি।
কলকাতা বড়বাজারের একটা কাপড়ের দোকানে কাজ করেন বাদল গজী। মাসমাইনে ৭,০০০ টাকা। বাড়িতে মা বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে ভরপুর সংসার। মেয়ে বি.এ. থার্ড ইয়ার আর ছেলে উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে।

আজ বাদলদা'র বাড়িতে পিকনিকের আয়োজন সামান্য। মুরগির মাংস আর ভাত। এতদিন ধরে যারা যৌথ রান্নাঘরে সাহায্য করেছেন, তাদের খাওয়ানোর আয়োজন করা হয়েছে। সকাল থেকে আয়োজনের কাজে লেগে পড়েছেন বাদলদা। বাসন মাজা, মাংস ধোয়া, বাটনা বাটা - বৌদিও হাত লাগিয়েছেন কাজে।
‘এমন পিকনিক প্রতিমাসেই লেগে থাকে আমাদের বাড়িতে। কখনো ছেলের বন্ধুরা তো কখনো মেয়ের বন্ধুরা।’
-‘প্রতিমাসে এমন হুজ্জুতি সহ্য হয় বাদলদা?’
-‘এ আর হুজ্জুতির কী আছে! ওরা একটু আনন্দ করে। আমরা যোগাড় করে দিই, ব্যাস! বাসন তো মাজতেই হয়, দুটো বাসন নয় বেশিই পড়ল।’
‘এই ধরো কলকাতায় বড়বাজারে যাই; কতজনায় কত কিছু এনে দিতে বলে। এনে দিই, যদি তার কাজে আসতে পারি আর কি।’
-‘কিছু এনে দিলে টাকা নাও তো?’
-‘টাকা কেন নেব! আমাকে তো কলকাতায় যেতেই হয়। একটা সামান্য জিনিস এনে দিয়ে টাকা নেব কেন? কত বছর ধরে এ পাড়ায় বাস করছি। পরিচিত মানুষের কাছ থেকে পয়সা নেওয়া যায় না নেওয়া উচিত? আমার সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক। নিজেকে হতে হবে জলের মত। তবেই তুমি সবার সাথে মিলতে পারবে। আচরণ হবে হাঁসের মত। কাদা ঘাঁটলেও গায়ে কাদা লাগবেনা।’
অলস জীবনযাপন না-পসন্দ বাদলদা’র। লকডাউনেও ট্রান্সপোর্টে কাজকর্ম চলেছে। মালিক যেমন পারছে মাইনে দিচ্ছে। ট্রেন চললে আবার কাজে যোগ দেবেন বাদলদা।
Leave a Reply