টাকার দাম দ্রুত পড়ে যাওয়ায় একটা হৈ চৈ শুরু হয়েছে। খুব স্বাভাবিক। তবু এই সময়ে একটু মনে করে নেওয়া দরকার টাকার দাম কবে বাঁধা ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার বা আইএমএফ-এর মডেলে সমস্ত দেশের মুদ্রার দাম একটা নির্দিষ্ট মানের সোনার মূল্যে বাঁধা ছিল। সেই মূল্যের এক শতাংশ ওপরে বা নিচে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দাম ওঠা পড়া করত। এটাকে অর্থনীতির ভাষায় ‘সিক্সথ এক্সচেঞ্জ রেট রেজিম’ বলা হত। তখন কোনো দেশের সরকারকে তার নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়ণ করতে হলে আইএমএফ-এর থেকে আগাম অনুমতি নিতে হত।
তারপর, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, আরব-ইজরায়েল যুদ্ধ, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়া ইত্যাদি নানা ঘটনায় পৃথিবীর পটপরিবর্তন হল। এবং সত্তরের দশকের গোড়ায় এসে সবাই অবাক বিস্ময়ে দেখল, ডলারেরও দাম পড়ে যেতে পারে। সেই হলো সূচনা। দুনিয়ার ফিনান্স ব্যবস্থা ভাঙতে থাকল। ধীরে ধীরে প্রধান প্রধান দেশগুলো তাদের নিজস্ব মুদ্রার মূল্যায়ন শুরু করল আইএমএফ-এর নিয়ম ভেঙে এবং আইএমএফ সেগুলোকেই বিধিবদ্ধ করতে থাকল। এখন যে মাছ-পটলের মতো বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের হার পাল্টাচ্ছে, তার শুরুয়াত হয়েছে তখন থেকে।
নব্বইয়ের দশকে গ্লোবালাইজেশনের পর থেকে শেয়ার ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠে গেল ও দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক এসে গেল। এই পরিপ্রেক্ষিতেই আমাদের দেশেও সবরকম সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠে গেল।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি বা শেষ পর্যন্ত, আমাদের দেশের হাতে যে টাকা থাকত তা দিয়ে ইচ্ছে মতো ডলার কেনা যেত না। কিন্তু সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়ে এমন অবস্থা এল, যখন টাকা দিয়ে যত খুশি ডলার কেনা যায়। সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায়, বিদেশ থেকে ডলার বেশি আসায় ডলারের দাম পড়েছে। এখন এদেশ থেকে ডলার বেশি সরে যাওয়ায় টাকার দাম পড়ছে। আমাদের দেশের তেল কোম্পানিগুলোকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছে, বাজার থেকে ডলার কিনতে হবে না, আপাতত টাকার দাম পড়া ঠেকাতে কোম্পানিগুলোকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কই ডলার সরবরাহ করবে।
Leave a Reply