সঞ্জয় ঘোষ, জয়নগর মজিলপুর, ৩০ জুলাই#
জয়নগর মজিলপুর পৌরসভার দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে চার ও বারো নম্বর ওয়ার্ডে লোকালয়হীন চাষের খেতের অঞ্চল। কালভার্টের পূর্বে বারো ও পশ্চিমে চার নম্বর ওয়ার্ড। সামান্য দূরে দক্ষিণে ফুটিগোদা গ্রামের পঞ্চায়েত অঞ্চলের সর্দারপাড়া। এখানে হাদের বাদা। এখানকার সমস্যাগুলি সম্বন্ধে কথা হল এ অঞ্চলের চাষি ও ভাগচাষিদের সাথে। চার নম্বর ওয়ার্ডের দিলীপ দাস (৬২), তরুণ দাস (৩৮), গোপাল দাস (৬০), শঙ্কর মণ্ডল (৭০), প্রবীর দাস (৪০), গয়েরপুরের পাঁচু মিস্ত্রি (৪৫), ফুটিগোদা সর্দারপাড়ার আবদুল খালেক নাইয়া (৬২) প্রভৃতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাদের বাদায় আগে বর্ষাকালে কোমর সমান জল দাঁড়াত, চাষ হত না। কারণ এখান দিয়েই মজিলপুরের প্রায় সব ওয়ার্ডের জল বেরোনোর পথ। বছর দশেক আগে, পৌর অঞ্চলের সীমান্তে ফুটিগোদা পঞ্চায়েত অঞ্চলের শুরু থেকে খাল কেটে জল বেরোনোর ব্যবস্থা করা হয়। সব জল বেরিয়ে গেলেও আরেক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পৌষ মাঘ মাসে মাটির তলা থেকে আয়রণ (লোহা) উঠে জল লাল হয়ে যাচ্ছে। জমিতে নোনাভাব বাড়ছে, পুকুরের জলও নোনা হচ্ছে। গাছ হলদে হয়ে যাচ্ছে বহু জায়গায়। চাষ হচ্ছে না। গত ২২ আষাঢ় খেতের থেকে দু-তিন ফুট নিচের খালে এক ফোঁটা জল ছিল না, আর ৯ শ্রাবণ আঠারো দিনের অবিরাম বৃষ্টিতে খেতের ওপরে আড়াই ফুট জল। রোয়া ধান গাছ সব নষ্ট হয়ে গেছে, মাটির রাস্তায় ছ-আট ইঞ্চি জল দাঁড়িয়েছে। পুকুর রাস্তা খেত সব একাকার। দুটি কিশোর খেতে ছাকনি জাল দিয়ে মাছ ধরছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চাষিদের দাবি —
১) বিষ্ণুপুরের কালভার্টের কাছ থেকে নিচু ও গভীর করে বটতলা হাদের বাদা পর্যন্ত খাল কাটাতে হবে যাতে বর্ষাকালে জল বেরোতে পারে আর গ্রীষ্মকালে হুগলি নদীর মিঠেল জল আসতে পারে। কারণ, গ্রীষ্মে এখানে জলাভাবে পুকুর কেটে বা পাম্প দিয়ে জল তুলে চাষ করতে হয়, যা ব্যয়বহুল।
২) ফুটিগোদা কালভার্টের কাছে কয়ালদের বাগানের মাথায় স্লুইস গেট বসাতে হবে। তাহলে প্রয়োজনমতো জল ছাড়া বা রাখা যাবে।
৩) হাদের বাদা থেকে খটির বাজারের মাঝে খালে বিরানব্বই জায়গায় নিচে ঘন নেটের জাল, দু-দিকে পাটা ও মাঝে ঘুনি-আঁটল দিয়ে মাছ ধরার জন্য জল বেরোনোর পথে বাধা হচ্ছে। এগুলো সরিয়ে দিতে হবে। যাতে জল তাড়াতাড়ি বেরোতে ও আসতে পারে বর্ষায় ও গ্রীষ্মে।
৪) যেসব চাষির বীজধান নষ্ট হয়ে গেছে, তাদের বীজধান দিতে হবে।
৫) জয়নগর-মজিলপুর পৌরসভাভুক্ত এই অঞ্চলে বাস্তুজমি ও চাষের জমির ট্যাক্স একই হারে নেওয়া হয়। চাষের জমির ট্যাক্স কমানোর দাবি উঠছে চাষিদের পক্ষ থেকে।
চাষিদের আশঙ্কা, এখন আর বৃষ্টি না হলেও এক মাস লাগবে জল নামতে। আরও একমাস লাগবে নতুন বীজতলা তৈরি করতে। অর্থাৎ দু-মাস পরে চাষ শুরু করা যাবে। পনেরোই ভাদ্রের মধ্যে শুরু করা না গেলে আর চাষ করা যাবে না বলে অভিজ্ঞ চাষিদের মত। ওপরের দাবিগুলি পূরণ হলে জয়নগর থেকে খটিরবাজার পর্যন্ত অঞ্চলের দেড় দু-হাজার চাষি উপকৃত হবে।
রায়দীঘি থানার কাশিনগরেও কোমর সমান জল। খাল সংস্কারের অভাবে জল বেরোবার রাস্তা পাচ্ছে না। খালগুলো জবরদখল হয়ে আছে বেআইনিভাবে। রাজনৈতিক মদত আছে এর পেছনে, সরকার প্রশাসন উদাসীন।
নিমপিঠ পঞ্চায়েত অঞ্চল এবং জয়নগর মজিলপুর পৌরসভাভুক্ত চাঁপাতলা অঞ্চলেও খাল সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিনের।
Leave a Reply