প্রতিবেদনটি ঢাকা থেকে গত ১২ জুলাই ২০২০, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরীর সৌজন্যে প্রাপ্ত
বিদায়ী জুন মাসে দেশের সড়ক-মহাসড়কে ৩৫৮ টি দুর্ঘটনায় ৩৬৮ জন নিহত ও ৫১৮ জন আহত হয়েছে। একই সময় রেলপথে ২০ টি দুর্ঘটনায় ১৫জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১৭ টি দুর্ঘটনায় ৪৫ জন নিহত ও ৬০ জন আহত এবং ১০ জন নিখোঁজ সংবাদ পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক, অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে ১২ জুন রবিবার সংগঠনটি এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এইমাসে সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের মধ্যে ১৬২ জন চালক, ১২৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ১১৩ জন পথচারী, ৬২ জন নারী, ৫৭ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে ২১ জন বিজিবি, ১৮ জন আনসার, ১৩ জন পুলিশ ও ৫ জন সেনাবাহিনীর সদস্য, ২৮ জন শিশু, ২৩ জন শিক্ষার্থী, ১১ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ৭ জন শিক্ষক, ১ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, এবং ১ জন প্রকৌশলীর পরিচয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছে ১১৬ জন চালক, ৯৮ জন পথচারী, ৪৯ জন নারী, ৪৬ জন পরিবহন শ্রমিক, ২১ জন শিশু, ১৯ জন ছাত্র-ছাত্রী, ০৮ জন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ০৭ জন শিক্ষক ও ১ জন চিকিৎসক, ১ জন মুক্তিযোদ্ধা, ১জন প্রকৌশলী, ৫ জন পুলিশ ও ২ জন বিজিবি সদস্য।
এইমাসে সংগঠিত দুর্ঘটনায় ৩৪.৯ শতাংশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান, ২৪.১৫ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১২.১ শতাংশ বাস, ৯.২৪ শতাংশ নছিমন-করিমন, ৮.১১ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ৭.১৫ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিক্সা ও ইজিবাইক, ৪.৩৪ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ৮ জুন। এইদিনে ২২ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ২৫ জন আহত হয়। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংগঠিত হয় ১০ জুন। ৮ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহত ১৪ জন আহত হয়।
মোট দুর্ঘটনার ৫১.১২ শতাংশ গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ২৪.৫৮ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৫.০৮ শতাংশ খাদে পড়ে, ৭.৫৪ শতাংশ বিবিধ কারনে, ১.১২ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষ এবং ০.৫৬ শতাংশ চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পরিসংখ্যানে দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে এইমাসে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৪৮.৬ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩১.৫৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ১৩.৯৬ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ২.৭৯ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.৯৫ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ১.১২ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়।
মে মাসের তুলনায় বিগত জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ৫৬.১৪ শতাংশ, নিহত ৫৭.৩৪ শতাংশ ও আহতের হার ৪৩.৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতি মনে করে, সড়ক নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি ও জবাবদিহীতার অভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। সরকারের আন্তরিকতা ও বিগত নির্বাচনে রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলেও বর্তমান সরকারের দুটি বাজেটে তার কোন প্রতিফলন ঘটেনি। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস পদ্ধতি ঢেলে সাজানো ব্যাতিরেকে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
Leave a Reply